পাঠাও, উবার, ও ভাই, ও বোন, সহজ এসব আসার আগে বাইক নিয়ে রাস্তায় ঘুরে ফিরে বেড়ানো লোকজন নিজেকে খুব কুল ভাবতেন। এখনো ভাবেন, তবে আগে আশেপাশের মানুষজনও তাদের কুল ভাবতো আর এখন ভাবে পাঠাও ড্রাইভার। তবে সেটা সমস্যা না, একজন বাইকার মানে আসলেই কুল। ফাঁকা রাস্তায় গুনগুন করে মেটালিকা বা ঝুম বৃষ্টিতে বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা যাদের আছে তারাই জানেন জীবন কত জোশ।
তবে এই জোশ ও কুল জীবনের অন্তরালে রয়েছে কিছু সমস্যা, যারা বাইক চালায় শুধুমাত্র তারাই সেটা বুঝতে পারে। শাঁখের করাতের মত বিপদগুলোর মূহুর্তে মনে হয়, হায় জীবন, তুই এত কঠিন কেন?
১. ফোন কল
বাইক চলাকালীন ফোন এলো, জরুরী ফোন ভেবে রাস্তায় কোনোমতে বাইক থামিয়ে ফোন রিসিভ করে দেখলেন মোবাইল অপারেটর থেকে সুললিত কণ্ঠের নারী কন্ঠ আপনাকে আরেফিন রুমি কিংবা বালামের গানের কলার টিউন সেট করার জন্য বলছে। কেমনটা লাগে তখন?
২. বৃষ্টিতে হেলমেট
ঝুম বৃষ্টিতে বাইক চালানোর মজাই অন্যরকম। কিন্তু মূল সমস্যাটা হেলমেট নিয়ে । হেলমেটের গ্লাস নামিয়ে রাখলে বৃষ্টির ফোটার নকশায় সামনের রাস্তা দেখতে মনে হবে রাশিয়ার তুষারপাতে চলে এসেছেন। আবার হেলমেটের গ্লাস খুলে রাখলে বৃষ্টির ফোটা চোখ মুখ ভিজিয়ে বাংলা সিনেমার হিরো বানিয়ে দেয়।
৩. বাইক ওয়াশ
খুব পার্ট সার্ট মারতে শখ করে বাইকটাকে সাবান শ্যাম্পু , বাইওয়াশার দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করলেন। আবার ধোয়া শেষে নিজের গায়ের কাপড় দিয়ে একটু ঘষে চকচকে করলেন, তারপর একদম শিওর থাকেন, যেদিন বের হবেন সেদিন আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামবেই। আর আপনার রাস্তায় হাটু সমান কাদা থাকবেই।
৪. বাইকার গ্লাভস
সেফটির অন্যতম অনুষঙ্গ বাইকার গ্লাভস। বাইক স্টার্ট দিলেই হেলমেটের ফাক দিয়ে চুল এসে চোখে মুখে ঢুকবে। আর গ্লাভস পরে থাকলে অতি অবশ্যই আপনার নাক চুলকাবে।
৫. হেলমেটের সুবাস
ভুলেও কাউকে, বিশেষত গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড গোত্রীয় কাউকে নিজের হেলমেটখানা পরিধান করতে দিবেন না। হেলমেটখানার বিশেষ সুবাসে, আজীবনের জন্য ব্রেকাপ ও ‘খবিস’ উপাধি পেয়ে যেতে পারেন। এবং সব বাইকারের সেইম ধারণা আমার হেলমেটে এতটাও গন্ধ নেই অন্যদের মত।
৬. পেট্রোল পাম্প আর সিগন্যাল
পেট্রোল পাম্পের লাইনে আর সিগন্যালে আপনি যদি এমন জায়গায় দাঁড়ান যেখান থেকে আপনি চালানো শুরু করলে পেছনের সবাই যেতে পারবে, সেই সময় সিগন্যাল ছাড়লে কোনভাবেই আপনার সুশীল ও শান্ত বাইকটি স্টার্ট নিবেনা। অন্যসময় স্টার্ট নিতে যদি ৫ সেকেন্ড সময় লাগে সেসময় স্টার্ট নিতে অবশ্যই আধামিনিট সময় লাগবেই। আর পেছন থেকে হর্ণের আওয়াজে আপনি সেদিনের মত ভুলে যাবেন আপনার নাম কি।
৭. অন্যান্য গাড়ি ও আপনি
যখনই আপনি অন্যান্য গাড়ির পাশ দিয়ে যেতে চাইবেন তখনই মাথায় ঘুরবে, ওর পাশ দিয়ে যাব কি যাব না। যাব কি যাব না। ডানে যাব না বায়ে যাব। সব ভেবে যখন বায়ে যাবেন তখন সামনের গাড়ি অবশ্যই বায়ে চেপে আপনাকে পারলে ফুটপাতে ঠুসে দিবে।
৮. রেইনকোট বিড়ম্বনা
ঝকঝকে রোদ দেখে গুনগুন করতে করতে বের হলেন সাধের বাইক নিয়ে। রাস্তায় বৃষ্টি শুরু হলে বাইক থামিয়ে রেইনকোট চাপিয়ে নিলেন গায়ে। কিন্তু এর দুই মিনিট পরেই বৃষ্টি বন্ধ হয়ে কাঠফাটা রোদ উঠবে। আপনি রেইনকোট খোলার সময় ও সুযোগ পাবেন না। তখন সেই অবস্থায় কেমন অনুভব করছেন সেই প্রশ্ন আপনাকে মুন্নী আপা করতেই পারেন ।