সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার জন্য ধর্মঘট শুরু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। তো কি ভাবলেন? একি শুধুই দূর্ভোগ? মোটেই না। এভ্রি ক্লাউড হ্যাজ এ্যা সিলভার লাইনিং। এই যে ধর্মঘট এই যে আন্দোলন এতে সুবিধাপাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। বি পজিটিভ ম্যান।
কুল কুল ওয়েদারে ভুরভুর করা সুগন্ধি মেখে বাইরে বের হয়ে দেখলেন আজিব শহর বদলে গেছে। রাস্তাঘাটে খালি মানুষ আর মানুষ। নেই গন্তব্যে যাওয়ার জন্য কোন বাহন। ফুস করে ফুটে যাওয়া বেলুনের মত মুখ গোমড়া করে দাঁড়ালেন বাসস্ট্যান্ডে।
কিন্তু একদম হতাশ হবেন না। পাশে দাঁড়ানো চোখমুখ কুঁচকে থাকা সুন্দরী আপুর দিকে ভালভাবে দেখুন, কারন কবি বলেছেন “ দিন দুনিয়ার উপর বিরক্ত কিন্তু মুখবন্ধ রমণী খুবই সৌন্দর্য্য”। বসকে টুপ করে মেসেজ করে দিন আজকে আসতে দেরী হবে, তারপর ব্যস্ত ভঙ্গিতে ট্রান্সপোর্ট খুঁজতে থাকুন যেন অফিসে লেট হলে খুবই সমস্যা। মনে মনে ওই আপুটির জন্যই ট্রান্সপোর্ট খুঁজুন। এতদিনের নানা চেষ্টায় যা হয়নি, আজকের এই চরম প্রাকৃতিক, মানসিক, শহুরে সংকটে পেয়ে যেতেই পারেন সুন্দরীর মন। জাস্ট কোনভাবে খুঁজে দিন একটি পাঠাও রাইড।
এদিকে কিন্তু পাঠাও ভাইয়া খুব সুইট। তিনি কিন্তু অন্যান্য দিন সুন্দরী আপুর নাম দেখলেই রাইড একসেপ্ট করেন আবার সাথে ভাংতি না থাকলে বলেন “নাহ আপু থাক চেঞ্জ লাগবেনা, শুধু ফাইভ স্টার দিয়েন”। তেনারা কিন্তু আজকের সিনেমার হিরো। রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেমন সেটা হতে পারে ফার্মগেট, সেখানে এ্যাপ অফ করে, এই মেঘাছন্ন হাওয়ায় সানগ্লাস লাগিয়ে এক পায়ের উপর পারলে দশ পা তুলে বাকের ভাইয়ের মত “হাওয়া মে উড়তা যায়ে মেরা লাল দোপাট্টা” শুনতে শুনতে পিঙ্ক ফ্লয়েডের হেড ব্যাং দেন। এবং সেই মুহুর্তে ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন এসে ও যদি বলে “ভাইয়া শাহ্বাগ যাবেন?” সেই পাঠাও ভাইয়া স্মিত হেসে উত্তর দেন, “যা দিবেন ৩০০ , একদাম ৩০০, একবার উঠলেই ৩০০, আস্তে আর জোরে ৩০০, পোলামাইয়া ৩০০”। মাঝে মাঝে কবি অবাক হয়ে ভাবেন, ‘রেখেছো পাঠাওওয়ালা করে মানুষ করোনি’।
এদিকে শুক্র শনিবার আপনি তো ছুটি কাটালেন আরাম করে। ছুটির দিনে দেবী দেখতে গেলেন হলে, রেস্টুরেন্টে খেলেন, ছবি দিয়ে চেক ইন মারলেন। কিন্তু কি ভাবলেন? রাস্তায় যে মানুষটা দিনরাত খেটে, বৃষ্টিতে, গরমে চিল্লাচিল্লির মধ্যে টিকে থাকা ও ফার্স্ট হওয়ার তাগিদে এদিক সেদিক ঠুয়া মেরে, অকুতোভয়, দুর্বার, চুরমার গতিতে বাস, ভ্যান চালায় তার কোন জীবন নাই? চলতে ফিরতে তাদের ব্রেকফেল হয়। ভালবাসার টানে কাছে আনে মন্ত্রের মত মানুষ, গরু, ছাগল, আইল্যান্ডের উপরে উঠে বাতাস খায়। বাস ও বাস সংশ্লিষ্ট সকলের যখন মন খারাপ থাকে এবং যখন বাসেরা বের হওয়ার আগে মেকাপ করতে ভুলে যায়, ব্যায়াম না করা ফিটনেসবিহীন গাড়ি কখনো সখনো মনের দুঃখে এক দুইজন মানুষ পিষে ফেলে, তাতে কি বা এমন আসে যায়? এর আবার বিচার কি? ঠেলে ঠুলে এদিক সেদিন গুতা দিয়ে তাদের ও বাঁচতে ইচ্ছে হয়। মাঝে মাঝে তাদের ও ছুটি পেতে মন চায়। আপনি মানুষ তারা মানুষ না?
এই ধর্মঘট কিন্তু একদিক থেকে অনাকাঙ্খিত ছুটি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা আমোদ প্রমোদ ও উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে পালন করছেন এই ছুটির দিন। বাস হেল্পার মজনু গত দুইদিনে সিটিং গাড়িতে স্ট্যান্ডিং মানুষ উঠিয়ে চিপাচুপা দিয়ে মারা বেশকিছু টাকা দিয়ে আজকে আরামসে মর্জিনারে নিয়ে কাচ্চি খাবে। খাওয়ার মাঝখানে আল্লাদে মর্জিনা বলে উঠবে “আপ্নে কিন্তু আমারে কথা দিসেন মাইয়া মানুষ উঠানির সময় পিঠে হাত দিবেন না, আল্লার কসম আমি কিন্তু বাপের বাড়ি যামুগা”। এছাড়াও ইতোমধ্যে ঘরে ঘরে মিষ্টির সাথে বিতরণ হয়েছে আলকাতরা। খুশির এই উৎসবে সামিল হতে আপনার ঝাঁ চকচকে গাড়ি নিয়ে বের হতে হবে রাস্তায়। হোলি উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে শহরজুড়ে।
মুখে ও গাড়িতে মবিল মেখে একটা নাগিন ডান্স দিয়ে সেই উৎসবে সামিল হয়েছেন দেশের গণ্যমান্য নেতারা।
পুরো দেশব্যাপী আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে, সেগুলো সম্প্রচারিত হচ্ছে সকল টিভি চ্যানেলে। বিশিষ্ট জননেতা, দূর দিনের কাণ্ডারি, শ্রমিক মালিক সাধারণ জনগণ ঐক্যজোটের প্রধান সম্পাদক মো: আবুল কাশেম বিন পাটোয়ারী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “শহুরে এই আবর্জনা, হর্ণ, পল্যুশন ইত্যাদি থেকে মানুষকে মুক্তি দিতেই এই আয়োজন। সকাল সকাল হাঁটার অভ্যাস আমাদের জনগণকে করে তুলবে আরো ফিট ও স্বাস্থ্যকর। পরিবহন শ্রমিক মালিকদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই অবস্থাকে স্বাগত ও ফলপ্রসূ বলে দাবি করেছেন তিনি”।
আবার এদিকে বিশেষ সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে, কক্সবাজার শ্বশুরবাড়ীতে আনন্দঘন এই ছুটি উপভোগ করছেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির উচ্চপদস্থ বিখ্যাত অশেষ বিশেষ সভাপতি মোঃ আখলাকুজ্জামান সবুজ মিয়া। শেষখবর পাওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর স্ত্রীকে ছোট আলু দিয়ে কই মাছ রান্নার নির্দেশ দিয়েছেন। আপাতত ধর্মঘট ও দুর্ভোগ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি গুনী এই নেতা। তবে খুব শীঘ্রই সকল পরিবহন শ্রমিক মালিকদের সকল মনবাসনা পূর্ণ হবে এবং কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় তাদের নিয়ে একটি বিশেষ ভোজের আয়োজন করবে বলে জানা গেছে।
*ছবি ফেইসবুক থেকে সংগৃহিত