আমি আর আপনি এমন একজন-দুইজনকে চিনি যাদের ভাব-সাব একটু রাজকীয়। খালি একটা মুকুট আর ঝকঝকে এক জোড়া পাদুকা হলেই হয়। তাই তাদের ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে মোঘল দ্বিতীয় সম্রাট বাদশাহ হুমায়ূনের কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো। চলুন তাহলে, আমরা বাদশাহ হুমায়ূনের জগতে ঢুকে যাই। মোঘল কায়দায় কুর্নিশ করে ঢুকতে হবে কিন্তু।
কল্পনা করুন, নকিব বাদশাহর নাম ঘোষণা করছে-
আল সুলতান আল আজম ওয়াল খাকাল আল মুকাররাম, জামিই সুলতানাত-ই-হাকিকি ওয়া মাজাজি, সৈয়দ আল সালাতিন, আবুল মোজাফফর নাসির উদ্দিন মোহাম্মাদ হুমায়ূন পাদশাহ, গাজি জিল্লুল্লাহ।
১. বয়স অনেক কিন্তু সাঁতার নিয়ে এখনো অজ্ঞ?
আপনি সাঁতার জানেন না তো কি হয়েছে কিন্তু ডুবতে তো জানেন। আপনার অগনিত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যদি একটি থাকে সাঁতার না জানা, তাহলে খুঁজে পেয়েছেন মোঘল সম্রাট বাদশাহ হুমায়ূন সাথে মিল। হুমায়ূনও জানতেননা সাঁতার। মজার জিনিস হচ্ছে, যেখানে তিনি সাঁতারই জানতেন না সেখানে সারা জীবন তাকে সাঁতরাতে হয়েছে স্রোতের বিপরীতে।
২. কোথাও ঘুরতে না যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে আপনার শত বাহানা?
যদি আপনার বন্ধুদের সাথে সীসা লাউঞ্জে যাওয়ার চেয়ে নিজের রুমের বুকশেলফে ফুঁ মারতে বেশি ভাল লাগে তাহলে জেনে খুশি হবেন যে বাদশাহ হুমায়ূনও ছিলেন আপনার মত অলস ও আরামপ্রিয়। তিনি ঘর-দরজা বন্ধ করে থাকতে পছন্দ করতেন। পিতাকে লেখা এক পত্রে তিনি একবার লিখেছিলেন, “আমার মানুষের সঙ্গ ভাল লাগে না। আমি একা থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।”
৩. খাতার পিছনে ডুডলে ভর্তি?
শুরুটা ডুডল দিয়ে আর এখন আপনি Adobe Illustrator – এ মাতাব্বর। আপনার মত সম্রাট হুমায়ূনেরও ছিল চিত্রকলার খোরাক। মোঘল চিত্রকলার শুরু কিন্তু তাঁকে দিয়েই।
৪. শনিতে বিশ্বাস করেন না রবিতে?
সকালবেলা যদি পত্রিকা খুলেই রাশিফল জানার মানুষ আপনি হন, তাহলে আপনার সাথে আরও একটি মিল আছে বাদশাহ হুমায়ূনের। তিনি পোশাক পরতেন গ্রহ-নক্ষত্র বিবেচনা করে। যেমন, রবিবার পরতেন হলুদ পোশাক। সেদিন তিনি রাজ্য পরিচালনা বিষয়ক সভা করতেন।
সোমবার পরতেন সবুজ পোশাক। ঐদিন তিনি আনন্দে থাকতেন। রাজসভাই গীত-বাদ্য হতো। মঙ্গলবার পরতেন লাল। সেইদিন যুদ্ধবিগ্রহ নিয়ে আলোচনা করতেন। তার মেজাজ থাকতো উগ্র এবং সামান্য অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিতেন।
৫. শত্রু এবং বন্ধুর মধ্যে তফাৎ বোঝা যায় না
যদি আপনার শত্রুরা আপনাকে নিয়ে ফেসবুকে “Feeling Angry” স্ট্যাটাস না দেয় তাহলে আপনি পেয়েছেন বাদশাহ হুমায়ূনের মত একজন শত্রু। চৌসার যুদ্ধে শের শাহ্ কঠিন নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, কোন অবস্থাতেই বাদশাহ হুমায়ূনকে হত্যা বা গ্রেফতার করা যাবে না। শের শাহ’র দ্বিতীয় পুত্র জালাল খাঁ এর কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হুমায়ূন আমার পরম শত্রু তা সত্যি। কিন্তু তিনি এমন শত্রু যাকে আমি শ্রদ্ধা ও সম্মান করি।” কনৌজের যুদ্ধে শের শাহ’র তীরন্দাজ বাহিনী চাইলেই হুমায়ূনকে মারতে পারতেন। কিন্তু শের শাহ’র কঠিন নির্দেশে তাঁকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়।
৬. জান চলে যাবে কিন্তু কথা নড়বে না।
কথা রাখার জন্য কি আপনি বিখ্যাত? হুমায়ূনও ছিলেন আপনার মত। চৌসার যুদ্ধের সময় হুমায়ূন যখন ঘোড়া নিয়ে কীর্তিনাশা নদীতে তলিয়ে যাচ্ছিলেন তখন একজন ভিসতিওয়ালা তার মশকটি দিয়ে তাঁকে নদী পার হতে সাহায্য করেন। সম্রাট হুমায়ূন তখন সেই ভিসতিওয়ালাকে তার সৎকর্মের প্রতিদান হিসাবে তাঁকে একদিনের জন্য হলেও দিল্লীর সিংহাসনে বসাবেন বলে কথা দেন। পরে হুমায়ূনের ভাই এবং অন্য উপদেষ্টাদের অনিচ্ছা সত্বেও হুমায়ূন সেই নিজাম ভিস্তিকে অর্ধেক দিনের জন্য দিল্লীর সিংহাসনে বসিয়েছিলেন।
হুমায়ূন শব্দের অর্থ সৌভাগ্যবান হলেও দিল্লির অন্য রাজাদের মতো তিনি এত ভাগ্যবান ছিলেন না। তবুও তাঁকে অদ্বিতীয় উপাধি দেওয়া যায়। যদি পেয়ে থাকেন চারটি বা এর বেশি মিল তাহলে আপনি আমাদের যুগের বাদশাহ হুমায়ূন। অভিনন্দন আপনাকে!
কার্টুনিস্ট – মারযুক রহমান রিফাত