তারেক মাসুদ ছিলেন একজন বাংলাদেশি স্বাধীন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, লেখক এবং গীতিকার। ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করা এই ব্যক্তি বাংলাদেশী চলচ্চিত্রকে তুলে ধরেছিলেন পুরো বিশ্বের সামনে। বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে তার অসাধারণ অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। চলুন ফিরে দেখি তার নির্মিত শ্রেষ্ঠ ৫টি চলচ্চিত্র সম্পর্কে।
১. আদম সুরত (১৯৮৯)
আদম সুরত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জীবনের ওপর নির্মাণ করা একটি প্রামাণ্যচিত্র। একজন শিল্পীর দৈনন্দিন কর্ম, শিল্পজীবন এবং বাংলার সংস্কৃতি নিয়েই তৈরী এই অসাধারণ প্রামাণ্যচিত্রটি তারেক মাসুদ এবং তার সহকারী চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীর মিলে টানা ৭ বছর ধরে নির্মাণ করেন। এস এম সুলতানের অতি সাধারণ জীবনযাপন, তার শৈল্পিক ভাবনা এবং বাংলার মানুষের প্রতি তার অশেষ ভালোবাসা এই প্রামাণ্যচিত্রে প্রকাশ পেয়েছে।
প্রামাণ্যচিত্রটি দেখুন-
২. মুক্তির গান এবং মুক্তির কথা
মুক্তির গান তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র। মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা লিয়ার লেভিন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণের জন্য একদল সাংস্কৃতিক কর্মীর সাহায্য নেন। “বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা” নামের দলের এই সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের দেশাত্মবোধক ও সংগ্রামী গান শুনিয়ে উজ্জীবিত করতেন। যা পরে তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদ লেভিনের কাছ থেকে প্রাপ্ত ফুটেজের এবং তাদের সংগৃহীত বিভিন্ন উপাদান যোগ করে এই ছবিটি নির্মাণ করেন। মুক্তির গান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হয়।
মুক্তির কথা
চার বছর ধরে(১৯৯৯৬-১৯৯৯) একদল তরুণ প্রোজেকশনিস্ট বাংলাদেশের গ্রাম ঘুরে ঘুরে মুক্তির গান এবং আরো কিছু মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ছবির উন্মুক্ত প্রদর্শন শুরু করেছিলেন। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলার বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন বয়সের মানুষদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন করে সামনে তুলে ধরা হয়, তাদের মতামত, মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয় নতুন আরেক গল্পের, “মুক্তির কথা” নাম যা প্রকাশিত হয়।
প্রামাণ্যচিত্রটি দেখুন-
৩. অন্তর্যাত্রা (২০০৬)
অন্তর্যাত্রা চলচ্চিত্রটি ডিজিটাল ফরম্যাটে নির্মিত এবং বলা হয় এটিই বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল চলচ্চিত্র। লন্ডনপ্রবাসী এক সিলেটি পরিবারের গল্প নিয়ে মূলত এই চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে। এই গল্পে মাতৃভূমির সাথে মানুষ যে মায়ার সম্পর্ক এবং যে ভালোবাসা তাও ফুটে উঠেছে।
চলচ্চিত্রটি দেখুন-
৪. রানওয়ে (২০১০)
রানওয়ে বাংলাদেশের বিখ্যাত বিকল্পধারার চলচ্চিত্র। এই ছবিটিতে একটি নিন্মবিত্ত পরিবারের শহরের চাকচিক্য বিপরীতে টিকে থাকার লড়াই দেখানো হয়েছে। একই সাথে ধর্মের নামে রাজনীতি, দুর্নীতি, অনিয়ম, গরিবদের অসহায়ত্ব তুলে ধরা হয়েছে। একটি বিমানবন্দর যেখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষ স্বপ্নের তাড়নায় উড়াল দিচ্ছে তারই রানওয়ের পাশে নিন্মবিত্ত একটি পরিবারের জীবনযাপনের সংগ্রাম নিয়েই এই ছবিটি।
চলচ্চিত্রটি দেখুন-
৫. মাটির ময়না (২০০২)
এটি তারেক পরিচালিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। বাংলাদেশের যুদ্ধের পূর্বের সেই অশান্ত সময়ের পটভূমিতে যুদ্ধ ও ধর্মের কারণে বিচ্ছিন্ন একটি পরিবারের গল্পকে কেন্দ্র করেই এই চলচ্চিত্রের কাহিনী, যার অনেকটাই তারেক মাসুদের নিজের ছেলেবেলার অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। ২০০২ সালে প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র হিসেবে মাটির ময়না কান চলচ্চিত্র উৎসবে ডিরেক্টর্স ফোর্টনাইট আয়োজনে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে ফিপরেস্কি আন্তর্জাতিক সমালোচকদের পুরষ্কার লাভ করে।
চলচ্চিত্রটি দেখুন-