in

মাইরালামাইরালা ভাল্লাগসেভাল্লাগসে সেন্টি খাইলামসেন্টি খাইলাম

বাঙালি এবং বিশাল (??) গরু ছাগলের হাট

কেন মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব এবং শৌচাগারের আবিষ্কার কেন মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার এই দুই প্রশ্নের উত্তর একসাথে পেতে হলে আপনাকে যে জায়গায় পদচারণ করতে হবে তা হলো কুরবানীর ঈদের গরু ছাগলের হাট। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কোন বিশেষ এলাকায় সফর অথবা কোনো খাজাবাবার ওরস শরীফ ছাড়া একমাত্র এই কুরবানির হাট উপলক্ষেই রাস্তাঘাটে এতগুলো বিশাল তোড়ন দেখতে পাওয়া যায়।এখানেই বোঝা যায় সমাজে হাটের মর্যাদা কত বেশী। চতুষ্পদী প্রাণীদের হাটে এসে দোপেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীরাও যে কত আশ্চর্য কাজকর্মে লিপ্ত হতে পারে তা হাটে না আসলে আপনি আঁচ করতে পারবেন না।

ঘ্রাণ ইন্দ্রিয় এবং হাট

হাটের সীমানার কাছাকাছি আসার সাথে সাথে আপনার যে ইন্দ্রিয় মস্তিষ্কে নেতিবাচক সংকেত পাঠানো শুরু করবে তা হলো আপনার ঘ্রাণ ইন্দ্রিয়। পাঠক যদি কখনো হাটে না যেয়ে থাকেন তবে এই ব্যাপারটি সম্পূর্ণরুপে অনুধাবন করতে পারবেন না।তবুও একটু বুঝিয়ে বলি। আপনার বাসার গ্যারেজে হয়ত ঈদের সময় ৫-১০ টি গরু থাকে (ছাগলদের বিবেচনা না করলেও চলবে)। এখন চিন্তা করুন হাজার হাজার গরু এক-ই জায়গায়,একসাথে….। যেখানে সেখানে প্রাকৃতিক কার্য সাধনের ভয়াবহতা যে কত ব্যাপক তা এখন বুঝতেই পারছেন, হে হে। শুধু দুর্গন্ধ নয়,ইউরিয়া সারের কাঁচামাল এই অমূল্য পদার্থ যে আপনার হাত পায়ে লেগে যাওয়ার ও সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই এই ব্যাপারে মাথা না ঘামিয়ে, গরু ছাগল পছন্দে মনযোগ দেওয়া-ই বুদ্ধিমানের কাজ।

নিশ্চিত রোমাঞ্চ

এডভেঞ্চারের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা সত্ত্বেও ফাঁকা পকেটের দরুন যারা পার্বত্য চট্টগ্রাম,রাঙামাটি,বান্দরবন ট্যুর দিতে পারছেন না,তাদের জন্য দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর সুযোগ এই কুরবানির হাট। রোমাঞ্চের জন্য হাটে গমন কোনো অংশেই ট্রেকিং এর চেয়ে কম যায় না। কেনো তা বলছি। গরুর ব্যাপারীকে দাম জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে মহাশয় আচমকা ধাক্কা দিয়ে গরুকে আপনার দিকে ঠেলে দিবে (দু-দুইবার এইভাবে গো-ঠ্যাঙের পাড়া খেয়ে পা ফুলিয়ে ফেললেও এই কাজের উদ্দেশ্য বুঝতে পারলাম না)। এই আচমকা ধাক্কা কোনোরকমে সামলানোর সাথে সাথেই পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া গরুর পালের সবচেয়ে পাগল গরুটি দড়িছাড়া হয়ে আপনার দিকে তেড়ে আসবে। পাশ কাটিয়ে যে সরে যাবেন সেই অবস্থা ও থাকবে না কারণ ফাঁকা জায়গা মানেই সেখানে গোবর স্তূপ হয়ে আছে। ব্যাপারটা অনেকাংশেই গেম অফ থ্রোনস সিরিজের ব্যাটল অফ বাস্টার্ড অংশের কথা আপনাকে মনে করিয়ে দিবে। স্পাইডারম্যানের মত শারীরিক কসরত প্রদর্শন করতে না পারলে এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই। তাই গরুর হাটে সবসময় আশেপাশে গরুর অবস্থান সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। এক মূহুর্তের জন্য অসতর্ক হলেও ঈদ ঘরে রুটি-ঝোল খাওয়ার পরিবর্তে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাটানো লাগতে পারে।

 

হাটের স্নায়ুযুদ্ধ এবং মার্কেটিং ১০১

প্রচন্ড ভীড় ছাড়াও হাট ও নিউ মার্কেটে-গাউসিয়ার মধ্যে মিল হচ্ছে হার্ডকোর দামাদামি। ক্রেতা-বিক্রেতার এই মানসিক যুদ্ধ গত শতাব্দীর “স্নায়ুযুদ্ধ” কেও হার মানায়। আর এই যুদ্ধে সবচেয়ে পারদর্শী আমাদের পিতা, পিতামহরা। তাই দামাদামিতে দক্ষ হওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই কিছু বিশেষ “স্কিলসেটে”র অধিকারী হতে হবে। এক্ষেত্রে একটি ব্যক্তিগত কাহিনী না বললেই নয়। গত বছর এক পরিচিত ভাই এর সাথে হাটে গিয়েছিলাম। ভাইজানের দরদামের পরিকল্পনাটা এরূপ: প্রথমেই ভাই, ব্যাপারীকে সবচেয়ে বড় সালামটি দিয়ে করমর্দন করবেন। গরুর সাথে সাথে ব্যাপারীর ও জন্মস্থান, বাসস্থান যাবতীয় জীবন-বৃত্তান্ত জেনে নিবেন। গরু সম্পর্কে অপ্রয়োজনীয় কিন্তু চমকপ্রদ কিছু প্রশ্ন করে ব্যাপারীকে তাজ্জব করে দিবেন। এবার ভাই বেশ নাটকীয়তার সাথে গরুর দাম জিগ্যেস করবেন এই নির্দিষ্ট কথাটি বলে,”চাচা, দড়ি কি ছাড়বেন না ধরে রাখবেন?”। কাঠফাটা রোদের তাপ সত্ত্বেও, কম্পিউটার সায়েন্স পড়া ভাইয়ের এই অনবদ্য বাংলা ভাষার নৈপুণ্য আমাকে অভিভূত করেনি বললে ভুল বলা হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দামে বনাবনি না হওয়াতে এই দীর্ঘ আলাপচারিতার ফলে গড়ে তোলা বন্ধন যে ভেঙে খানখান হয়ে যায়,তা পাঠকের বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়। অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণের কারনে বরিশাল ও নোয়াখালী থেকে আগত দুই ব্যাপারীর সাথে ভাই এর বন্ধন বিচ্যুতি বেশ উত্তেজনার সৃষ্টি করে এবং ভাইকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় থেকে নিবৃত করে, তড়িঘড়ি করে আমরা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ি। তাছাড়া হাটের ব্যাপারীদের মার্কেটিং স্কিল এর সুনাম না করলেই নয়। নামীদামী কর্পোরেট হাউজে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ না পেলে বিবিএ এর ভাইয়েরা হাটে এসে ফ্রিতে হাতেকলমে অনেক কিছু শিখে যেতে পারেন। সাথে গরুটাও কেনা হয়ে গেলো।

গরীবের গরু-মহিষ অথবা ছাগল-ভেড়া

পাঠকের মনে হতে পারে যেহেতু গরু সামলানো বেশ কঠিন কাজ,তাই অনেকেই হাটে যেতে পারবেন না। এর জন্যই হয়ত সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে ছাগল আর ভেড়া পাঠিয়েছেন। বিশাল আকারের চতুষ্পদীদের একশন ফিগার বলতে পারেন এই প্রাণীগুলোকে। তাই দশ বছরের বাচ্চা থেকে ষাট বছরের দাদু, সবাই মনের আনন্দে ছাগলের দড়ি নিয়ে ঘুরতে পারে। আর ছাগলের জন্য এখন হাটে যাওয়া লাগে না, ফেরিওয়ালার মত ছাগল বিক্রেতারা রাস্তায় রাস্তায় ছাগল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাই সবার-ই একটু হলেও হাটে যাওয়ার শখ মিটে যায়।

 

চতুষ্পদী আর দোপেয়েদের মধ্যে বন্ধনটা এতটাই মধুর যে আদর করে (??) বুদ্ধিমান দোপেয়েরা কখনো নিজেদেরকেই ওই চতুষ্পদীদের নামে ডেকে ফেলে। কেনো ডাকে? হাটে গেলেই তা আরো ভালো করে বুঝতে পারবেন।

What do you think?

Leave a Reply

গরু কিনতে গিয়ে গরুর বদলে ব্যাপারীর পাছায় থাপ্পড় মেরে দিলেন উত্তরার জলন্ত অলিল

টিকেট ছাড়া এই ঈদে বাড়ি যাওয়ার ৫টি বাংলা টিপস