in , ,

ভাল্লাগসেভাল্লাগসে সেন্টি খাইলামসেন্টি খাইলাম

বঙ্গভুমে ব্যান্ড ও তার ইতিকথা : জেমস

ফারুক মাহফুজ আনাম কিন্তু ভক্তদের কাছে জেমস নামেই তিনি বেশি পরিচিত। জেমস মানেই তারুন্যের উন্মাদনা গানের সাথে তার বাবরি দোলানোতে দুলে যায় হাজারো মন, আর জেমসের কনসার্ট মানেই এখনো সেই ভালোবাসার উদ্দীপনা। এখনও মঞ্চে উঠে তার মতো দর্শকদের মন কাপিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশের আর কোন শিল্পীর নেই, আজকে আমাদের বংগভূমে ব্যান্ডের কথা বাংলাদেশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী রকস্টার জেমসকেই নিয়েই-

শুরু যেখানে, যেভাবে

জেমসের জন্ম নওগায় , জেমসের বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। তার সুবাদেই তিনি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রামে আসেন। চট্টগ্রামে এসেই জেমসের মাথায় উকি দিলো নতুন পাগলামি তার বাউন্ডুলেপনা। গান বাজনার প্রতি ঝোক তার বাবার পছন্দ ছিল না, ফলেই তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হলো। এরপর তার ঠাই মেলে চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে। আর সেখান থেকেই শুরু হয় তার সংগীত জীবন। জেমসের ক্যারিয়ারের প্রথম পর্যায়ের বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে এই আজিজ বোর্ডিং, তাই এখনো জেমস তার সেই সময়টাকে নিয়ে স্মৃতিকাতর হন। আজিজ বোর্ডিংয়ে থাকাকালীন অবস্থায় আরেক অসাধারন মিউজিসিয়ান ও গায়ক পাবলো এবং আরো কিছু বন্ধুকে নিয়ে গঠন করেন ব্যান্ড ফিলিংস।

সে সময় আজিজ বোর্ডিংয়ের একটা কামরা ছিল জেমস এবং ফিলিংস এর খাওয়া দাওয়া, ঘুমানো আর গান তৈরির কারখানা। ফিলিংস এর প্রথম এ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালে এবং এর পরের বছরই তার একক এ্যালবাম অনন্যা প্রকাশ পায়। যার প্রতিটি গানই ছিলো অসাধারন ।

নগরবাউল জেমস

ফিলিংসের মাধ্যমে জেমস ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন এবং পরবর্তী কালে গঠন করেন ব্যান্ডদল নগরবাউল। বাংলা গানের ক্ষেত্রে তিনিই প্রথম সাইকেডেলিক রক ঘরানার গান শুরু করেন। মূলত জেল থেকে বলছি গান দিয়েই তিনি বাংলা সঙ্গীতে তার নিজের জায়গা করে নেন , তখনকার সমকালীন সময়ে এ ধরনের গান করার এক ধরনের অবিশ্বাস্য রকমের সাহসের কাজ ছিলো কিন্তু ফাসির আসামীর করুন অনুভুতি নিয়েও যে  গান করা যায় জেমস তা করে করে প্রমান করে দেখান যে কেন তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কেন তিনি অন্যদের মতো নয়। নব্বইয়ের দশকে হাসান এবং আইয়ুব বাচ্চুর সাথে তিনিও এদেশের সঙ্গীতে রক বিপ্লব ঘটানোর একজন অংশীদার। জিম মরিসন, এরিক ক্ল্যাপটনদের দ্বারা প্রভাবিত যেমন অসাধারন ভোকালিস্ট তেমন গিটার বাজাতেও দারুন দক্ষ তিনি। ব্যান্ড সংগীত নিয়ে কাজ করলেও জেমসের সলো ক্যারিয়ারও কিন্তু বেশ উজ্জ্বল। এছাড়া তিনি বেশ কিছু বাংলা চলচ্চিত্রেও গান করেছেন।

পরবর্তীতে ২০০৪ সালের  দিকে বলিউড সঙ্গীত পরিচালক প্রীতম এর সাথে মিলে বলিউডেও কাজ করা শুরু করেন জেমস। গ্যাংস্টার সিনেমায় মহীনের ঘোড়াগুলির বিখ্যাত গান ‘ভেবে দেখেছো কি’ এর সুরে হিন্দি ‘ভিগি ভিগি’ গানটি তাকে ভারতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়। এছাড়া প্রীতমের সাথে তার মেট্রো নামে আরেকটি ব্যান্ড রয়েছে। তিনি চাল চালে, আলভিদা, রিশতে নামে আরো কিছু হিন্দি গান করেন ২০০৭-২০১৩ সাল পর্যন্ত। লতিফুল ইসলাম শিবলি, মারজুক রাসেল, আসাদ দেহলোভী, প্রিন্স মাহমুদ, গোলাম মোরশেদ লায়ন এমন কোন স্বনামধন্য গীতিকার নেই যার সাথে তিনি কাজ করেননি।

কেন তিনি জেমস?

তার সমসাময়িক না শুধু এখনকার অনেক শিল্পীর থেকেও অনেক বেশি এগিয়ে তিনি। তিনি শুধু সুর নির্ভর গান নিয়ে পরে থাকেন না. তার গান অধিকাংশ সময়েই কথা নির্ভর। তিনি প্রেমিক, তিনি প্রতিবাদী আবার একইসাথে তার গান মানুষকে ভাবায়, হাসায়, কাঁদায়। তারা ‘বাবা কত দিন দেখিনা তোমায়’ শুনে যেমন বাবা হারা কোন মানুষের মনে হাহাকার তৈরি হয় তেমনি ক্যামেলিয়া হাতে এক সন্ধ্যায় লাইন শুনে নতুন প্রেমে পড়া কোন প্রেমিকের মনেও প্রেমিকার জন্য আন্দোলন তৈরি হয়। এমন কোন বিষয় নেই তার গানে স্থান পায়নি। তাই লেইস ফিতা লেইস, সিনায় সিনায় মারে টান, মিরাবাই, মা, পদ্ম পাতার জল, সুলতানা বিবিয়ানা এখনো বাংলা গানের প্রথম সারিতে থাকা গানগুলোর মধ্যেই পড়ে। গান ছাড়াও বিজ্ঞাপনে কাজ করা, নিজের প্রোডাকশন হাউজের ব্যবসা থাকলেও তিনি কখনও হারিয়ে যাননি আর দশজনের মত। তাই এখনও যেকোনো মেইন্সট্রিম কনসার্টে একদম শেষের স্লটটা তার জন্যেই বরাদ্দ থাকে, মঞ্চে উঠার সময় অন্য শিল্পীদের মাথা তাকে দেখে এমনিতেই নুয়ে যায়। এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত তার জন্য অপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ, মঞ্চে উঠে এক হাত তুলে বা মাইকে গর্জন তুলে কেমন আছো ডাক দেয়ার সাথে সাথে দর্শক সারিতে যে উন্মাদনা বয়ে যায় তা বলে বোঝানোর মত নয়। আর সেজন্যই তিনি আর সবার থেকে আলাদা।

তিনি বাংলা গানের মুকুটবিহীন সম্রাট and a pure rock star from this land of rock music, remember his name he is one and only জেমস। আমাদের জেমস।

ছবি: ইন্টারনেট

What do you think?

Written by Bishal Dhar

নাম ধাম তো দেখসেন আর কি দেখেন , অতিরিক্ত কৌতুহল ভালো না যান লেখা পড়েন

Leave a Reply

দাম বাড়ার কথা শুনে ব্যাংকে গ্যাস সিলিন্ডার জমা করার হিড়িক

মহাবিশ্বের যেকোনো গ্রহে টিকে থাকার বিশেষ যোগ্যতা অর্জন করলো ঢাকাবাসী