অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্ত জলিলের কাজ । কিন্তু না, এখন এই পুরাতন বিধ্বংসী বাণী মোটেও সবখানে চলবে না। এখন সব সম্ভব হবে, এমন অনেক কিছুই হবে যা কেউ ভাবেনি আগে তেমন জায়গা পাওয়া গেছে এই মহাবিশ্বের নামকরা, জ্বালাময়ী, জ্ঞানী গুণিদের অভয়ারণ্য, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কখনো ভেবেছিলেন? ফিরে আসবে শায়েস্তা খাঁয়েরও আগের যুগ, যেখানে প্রায় বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে, চা সিঙ্গাড়া, চপ, সমুচা, বেগুনী, আলুনি, বার্গার, স্যান্ডউইচ, পোলাও, বিরিয়ানী, মাংস কি নেই এখানে? অবশ্য অনেকে ভাবতে পারেন আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গর্ব নিয়ে মানুষজন কেন ট্রল করছে? আসলে সব হিংসা, হিংসা, তোমাদের হিংসা। যারা চান্স পায়নি তারাই একজোট হয়ে হিংসার বর্শবর্তী হয়ে এসব ছড়াচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনার টুকরা ড্রপার ছেলেপিলের আর কোন চিন্তাই থাকলো না, প্রেম করে চৌধুরী সাহেবের মেয়েকে বিয়ে করতে চাইলে যখন হুঙ্কার দিয়ে চৌধুরী বলবে “তুমি কয় টাকা ইনকাম করো ? কি খাওয়াবে আমার মেয়েকে ?” তখন সে গর্ব করে বুক ফুলিয়ে উত্তর দিতে পারে “১০ টাকায় যেখানে এক গ্লাস পানিও পাওয়া যায়না সেখানে আপনার মেয়েকে আমি ১০ টকায় চা, সিঙ্গাড়া, চপ, সমুচা খেতে দিতে পারি চৌধুরী সাহেব, এত অবহেলা করবেন না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা মেয়েকে ঘরের বউ বানিয়ে নিতে কিন্তু সাবধান। এই মেয়ে হবে দুর্বার। এই মেয়েকে শুধু তিনভরি গয়না, ১০ লক্ষ টাকা কাবিন আর দামী শাড়ি দিলেই চলবেনা। ফটফট করে এই মেয়ে মুখের উপর বলে দেবে “ আমি ১০ টাকায় চা, সিঙ্গাড়া, চপ, সমুচা, ছোলামুড়ি, পেঁয়াজু , পুরি এতকিছু খাওয়া মেয়ে, এত কম জিনিস কেন দিসেন? আমি কি হিসাব জানিনা?”
এই চা সিঙ্গাড়া শুধু ঢাবির গর্ব ও ঐতিহ্য নয় ,এটি পুরোদেশবাসীর জন্য আনন্দের সংবাদ। ঘরে ঘরে সুন্দরী ললনারা তাদের স্বামীকে বলবে, “এই চলোনা একটু ঢাবি থেকে ঘুরে আসি”। এখানে তো শুধু চা সিঙ্গাড়া নয়, আরো অনেক কিছুই পাওয়া যায় একদম বিনামূল্যে। ভিসি সাহেব সেগুলো উল্ল্যেখ করতে ভুলে গেছেন। এখানে ফ্রি তে ডালের সাথে আনলিমিটেড পানি পাওয়া যায়। হলের তরকারীতে ফ্রিতে কখনো সখনো আমিষের জোগানদাতা পুষ্টিকর তেলাপোকাও পাওয়া যায়।
ঢাবি থেকে পাস করা বেকার যুবকদের কখনো খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়নি এই ঢাবি। কিছুদিনের মধ্যেই, ইন্টারনেট, ফোন, ফেসবুক আর ব্লাউজের সাথে যোগ হবে চা সিঙ্গাড়া। এসব তোমাদের কে দিয়েছে ? এসব নিয়ে ট্রল করো লজ্জা লাগেনা ?
মাঝে মাঝে যারা মায়ের সাথে শপিংএ গিয়ে যার লজ্জায় মারা যান, তোমরা দুঃখ করোনা। মা যখন দোকানদারকে ৩হাজার টাকার জিনিস ৩০০ টাকায় দিতে বলে, জেনে রেখো, তোমার মা এই ১০ টাকায় চা সিঙ্গাড়া সমুচা থিওরীতে ইন্সপায়ার্ড।
ঐতিহ্যবাহী এই ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্য , শিক্ষার মান, গবেষণা সবকিছু ছাপিয়ে প্রধান হয়ে উঠেছে ১০ টাকায় এত খাবার। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই বিরল সুযোগ গ্রহন করতে আসতে পারেন জ্ঞানপিপাসুরা। গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ডে স্থান পাওয়া এই চা সিঙ্গাড়া খাওয়ার জন্য অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড এর শিক্ষার্থীরা আফসোস করতে করতে এই দেশে ছুটে আসছেন।
যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বয়ং ভিসি এই দুর্মূল্যের বাজারে এত সস্তায় ছাত্রদের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন, তার সম্মানে বিশ্ববিদ্যালয়ের লগোতে সিঙ্গাড়া সমুচার ব্যবহার না করলে, ঐতিহ্যটা ঠিকমত ফুটে উঠছে না। পড়াশোনা , গবেষণা এসবের হালচাল যাই হোক, ১০ টাকায় এত কার্ব আর ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে ছাত্ররা হয়ে উঠবে, আরো চৌকষ, জ্ঞানী, বুদ্ধিদীপ্ত, আলোকের দিশারি, দেশ ও জাতির কান্ডারি।
আবার শুধু গিনেজে নাম উঠলেই হবেনা, এর সাথে জড়িয়ে আছে আরো বিভিন্ন খাত। ঢাবির ক্যাফেটেরিয়াকে অনতিবিলম্বে ইউনেস্কোর বিখ্যাত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে । আর আর অল্প টাকায় যে এত পরিমাণ ক্যালোরি সরবরাহ করা হচ্ছে সেজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ভিসি ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তর্জাতিক পুরষ্কার সহ ইয়েমেন, হাইতি, সুদানের খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনিত করার জোর দাবি জানানো হোক।