প্রেমিকা আগে না সিগারেট আগে? এই প্রশ্নে একজন সিগারেটপ্রেমী চাইবে দুইটাকেই একসাথে আগে রাখতে! কিন্তু এক বনে যেমন দুই রাজা থাকতে পারে না তেমনি একজন প্রেমিকা কখনোই প্রেমিকের হৃদয়ে সিগারেটের সাথে সহাবস্থানে থাকতে চায় না। স্বৈরশাসকের মতো প্রেমিকা কোন ভোটাভোটি কিংবা যুক্তিতর্কে না গিয়েই স্বভাবগত ভাবে জানিয়ে দেয়- সিগারেটের সাথে প্রেম করো আমি গেলাম! এমন স্বৈরশাসন টাইপ রাজ্যে টিকে থাকার জন্য ফাইনালি একজন সিগারেট খোর বুকে পাথর বেঁধে সিদ্ধান্ত নেয় সিগারেটকে বিসর্জন দেয়ার! এরপর শুরু নিজের সাথে, সমাজের সাথে, পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে তার এক কঠিন যুদ্ধ এবং বেশিরিভাগ ক্ষেত্রেই সফল হয় না একজন ধোঁয়াযোদ্ধা! কেনো সফল হয় না? কী কী কারনে ছাড়তে পারে না সিগারেট? সফল না হওয়ার পেছনে কী কী ফ্যাক্টর বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়? তাই জানাচ্ছেন পরাজিত এক যোদ্ধা। (এইটা আগের লেখা, এবার পোলাপান প্রেমিকার জন্য না, সিগারেট খাওয়া ছাড়তে চাইবে অভাবে। কিন্তু পারবে না, পারবে না, পারবে না!)
#১
থ্রিলার কোন মুভি দেখছেন, কিংবা নতুন রিলিজ হওয়া অসাধারণ কোন মুভি। মুভির কোন একটা টান টান উত্তেজনাপূর্ণ সিন কিংবা একদমই নড়বড়ে কোন সিনে নায়ক একটা সিগারেট ধরিয়ে জম্পেশ একটা টান দিয়ে আয়েসি ভঙ্গিতে ছেড়ে দিলো ধোঁয়া। তখনই আবিষ্কার করলেন-অদ্ভুত ধোয়াহীনতায় ভুগছে আপনার প্রেমিক হৃদয়, হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে, ঠোট নিশপিশ করছে! আপনি জানেন এইসব লক্ষণ দেখা দিলে বাসার স্টকে থাকা শেষ সিগারেটটিই একমাত্র ভরসা। এই লক্ষনগুলো থেকে বাঁচার জন্য আপনাকে একটা সিগারেট ধরাতেই হবে।
#২
সকালের নাস্তা করার পর অনেক কষ্টে সিগারেটটা না খেয়ে অফিসে যাওয়ার সাথে সাথে মুখোমুখি আরেক কঠিন প্রতিপক্ষের! আপনি ডেস্কে বসে সকালের সফলতা মনে করে আরেকটু শক্তি সঞ্চয় করবেন, সাথে সাথে অফিসের স্মোকফ্রিকরা এসে বলবে-ভাই, চলেন নিচে! কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে প্রথমজনকে প্রত্যাখ্যান করলেও প্রতি ১৫ মিনিট পর পর একজন করে আসবে! আপনার প্রেমিক হৃদয় সবাইকে ইগ্নোর করতে পারবে না। এক গবেষনায় দেখা গেছে-স্মোকফ্রিক ভাই-ব্রাদারদের আমন্ত্রণ না থাকলে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেয়া কঠিন কোন কাজ হতো না!
#৩
এই যুদ্ধে অনেকগুলো প্রতিপক্ষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ বন্ধুরা। টংয়ের আড্ডায় সিগারেট ব্যাটারি ব্যাকআপ না থাকা ল্যাপটপের জন্য কারেন্ট, একই কথা! সেখানে গেলে আপনাকে সিগারেট খেতেই হবে! না খেলে মুখের দিকে তারা ধোঁয়া ছাড়বে! আর সিগারেট প্রেমির নাকে সিগারেটের ধোয়ার গন্ধ পিরানহা মাছের নাকে রক্তের গন্ধের মতো! আপনি মনে প্রানে ইগ্নোর করতে চাইলেও সিগারেটের জন্য আপনার প্রেমিক হৃদয় তা ইগ্নোর করতে পারবে না! আর যদি কখনো বন্ধুরা আপনার অসাবধাণতাবশত বুঝে ফেলে আপনি প্রেমিকার কথায় সিগারেট ছাড়তে চাইছেন, তাহলে এই যুদ্ধে তারা আপনাকে পরাজিত করার স্নাইপার!
#৪
একজন ব্যচেলরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়-এই ভাঙ্গাচোড়া জীবন নিয়ে বেঁচে আছেন কেনো? উত্তর আসবে- বৃহস্পতিবার রাত আছে বলে! সারা সপ্তাহ আপনি সিগারেটকে পাশ কাটিয়ে চলতে পারলেও বৃহস্পতিবার রাতে আর কোন শক্তি দিয়েই তাকে আটকাতে পারবেন না। এই রাতে একই সাথে বন্ধু, রুমমেট, সিনেমার নায়ক, ক্ষেত্র বিশেষে অফিস কলিগ সবাই একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়বে আপনার বিরুদ্ধে। পৃথিবী থেকে যেইদিন বৃহস্পতিবার রাত উঠে যাবে কেবল সেদিনই হয়তো কেউ কেউ এই যুদ্ধে সফল হবে।
#৫
এক সিরিয়াস গবেষণায় দেখা গেছে সিগারেট খেলে নাকি ৫ মিনিট আয়ু কমে যায়। আর আমাদের জীবনতো ভুলে ভরা! জীবনকে দেয়া কত শত প্রত্যাশা পুরণ করা হয়নি! আগামি কাল থেকে ফাটিয়ে পড়বো, জিমটা শুরু হবে কাল সকাল থেকেই, সামনের সেমিস্টারে সিজিপিএর বন্যা বইয়ে দিবো! অতীতে জীবনকে দেয়া এমন কতশত কথাইতো রাখা হয়নি! এত এত ওয়াদা বরখেলাপের কথা মনে হলেই নিজের ভেতর কাজ করে এক অদ্ভুত অপরাধবোধ! এই অপরাধবোধ থেকেই সিগারেট খেয়ে আয়ু কমিয়ে অতিতে গিয়ে যদি কথাগুলো রাখার কথা মনে হবে!