পৃথিবীর সব কিছুই নিয়মকানুন মেনে চলে। আর যে নিয়ম কানুন মেনে চলতে চায় না, আমরা তার জন্য নিয়ম কানুন বানাই। তেমনি খাবারেরও রয়েছে অনেক নিয়মকানুন। যেমন-খাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো না করা, আগে পাশের জনকে খাবার অফার করা বা তার প্লেটে বেড়ে দেয়া, একসাথে খেতে বসলে অন্যজনের খাওয়া শেষ হওয়ার আগে উঠে না যাওয়া। কিন্তু এইসব নিয়মকানুন সাধারণত সাধারণ মানুষদের জন্য। আপনি যখন অসাধারণ মানুষদের সাথে মানে আপনার বন্ধুদের সাথে (পড়ুন হাভাইত্তাদের সাথে) খেতে যাবেন তখনও আপনাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। বেশিরভাগ মানুষই এইসব নিয়ম জানেন। যারা জানেন না, তাদের জন্য সেইসব নিয়ম নিয়ে হাজির হয়েছে বেঙ্গল বিটস কায়দাকানুন টিম।
নিয়ম #১
সাধারণত কারো সাথে কোথাও খেতে গেলে আমরা আগে তাকে খাবার অফার করি বা তার তার দিকে খাবার বাড়িয়ে দেই। বন্ধুদের সাথে খেতে গেলে এই নিয়ম ভুলে যান। কারণ এখানে কেউ আপনাকে অফার করার জন্য মহান হৃদয় নিয়ে বসে নাই। খাবার অর্ডার করার পর খাবার টেবিলে আসার বেশ কিছু সময় আগে থেকেই নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিন। প্রয়োজনে শ্যাডো খাবার খাওয়ার প্র্যাকটিস করে একটু ওয়ার্ম আপ করে নিন। এরপর! খাবার আসলেই ঝাঁপিয়ে পড়ুন। মনে রাখবেন, খাবার টেবিলে আসার পর আপনি কেবল একবারই সময় পাবেন নিজের খাবারটুকু দখল করে নেয়ার জন্য। সুতরাং টেবিলে খাবার আসার সাথে সাথে যতটুকু পারেন মুখে পুরুন, দুই হাত ভর্তি করুন। মুখেরটা শেষ করে এক হাতেরটা মুখে পুরে দিয়েই আবার চেষ্টা করুন কিছু দখল করার। যদিও ৯৯.৯৯% ক্ষেত্রেই দ্বিতীয়বার নেয়ার জন্য টেবিলে কিছুই থাকে না। কিন্তু আশা হারাবেন না, চেষ্টা করে যান। মনে রাখবেন এক ফোঁটা পরিমাণ খাবার নিতে পারাও এখানে বিশ্বজয়ের সফলতা।
নিয়ম #২
সাধারণত খাবারের সময় তাড়াহুড়ো করাকে অভদ্রতা হিসেবে দেখা হয়। অনেকে হাভাইত্তা বলে। তাছাড়া গাপুসগুপুস করে খেতে গেলে মুখ থেকে খাবার ছিটকে সামনের জনের গায়ে পড়তে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন, বন্ধুদের সাথে খেতে গেলে হাভাইত্তা হওয়াই নিয়মকানুন। কারণ যাদের সাথে খেতে গেছেন তারা সবাই হাভাইত্তা। গাপুসগুপুস করেই খান, বেশি বেশি খান। মুখ থেকে খাবার ছিটকে বন্ধুর গায়ে পড়লে বিশেষ চিন্তা নিবেন না। বন্ধুর গায়ে ছিটকে পড়া খাবারটাও নিয়ে খেয়ে ফেলুন। যদিও আপনার আগেই আপনার বন্ধু সেই ছিটকে পড়া খাবারও মেরে দিতে পারে।
নিয়ম #৩
চুরি কাঁচি কিংবা চামুচ দিয়ে কোন খাবার খেতে যাবেন না। এই সব ভদ্রতা কেবল ক্লায়েন্ট, গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড ও বিয়ের জন্য আপনাকে দেখতে আসা গ্রুপের জন্য তোলা রাখুন। বন্ধুদের সাথে খেতে গিয়ে, চুরি-কাচি-চামুচকে একপাশে রেখে হাত আর দাঁত দিয়ে কাজ সারান। নাহলে দেখা যাবে আপনি চামুচ দিয়ে পিৎজা চেপে ধরে চুরি দিয়ে পিৎজার স্লাইস কাটছেন আর ভাবছেন চুরি এত ভোতা ক্যান! এই ফাঁকে আপনার বন্ধুরা পুরো পিৎজা শেষ করে আপনার চামুচের নিচের অংশটুকু কে খাবে তা নিয়ে প্রতিযোগীতা শুরু করে দিয়েছে।
নিয়ম #৪
সাধারণত দুজন বা কয়েকজন একসাথে খেতে বসলে অন্যদের খাবার শেষ হবার আগে নিজের খাওয়া শেষ করে উঠে যাওয়া ঠিক নয়। এই নিয়ম বন্ধুদের সাথে খেতে গেলেও মেনে চলুন। তবে নিজের খাবার শেষ করে হুদাই বসে থাকবেন না। বন্ধুর প্লেটে থেকে যাওয়া খাবার খেয়ে তা শেষ করতে তাকে সাহায্য করুন। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজেরটা শেষ করার সাথে বন্ধুরটাও শেষ হয়ে যায় কিংবা বন্ধুরা নিজেরটা শেষ করে আপনারটার দিকে তাকাইয়া থাকে। সেক্ষেত্রে নিজের খাবারকে নিরাপদ স্থানে রেখে বন্ধুর ভাগেরটা শেষ করার কথা ভাবতে পারেন।
নিয়ম #৫
সাধারণত কারো বাসায় বেড়াতে গেলে নাস্তা দিলে যার বাসায় গেছেন তাকে ডাকতে হয় একসাথে খেতে! এইটাও ভদ্রতা। তবে, বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গিয়ে এই ধরণের ফর্মালিটি মানার কোন দরকার নাই। বন্ধুকে খাবার আনার কাজে লাগান, আর আপনারা খেতে থাকুন। খাবার শেষ হয়ে গেলে আবার আনতে বলুন। এক্ষেত্রে একটা সুত্র মানতে পারেন-আপনার বন্ধুটি একটা খাবার এনে রেখে আরেকটা খাবার এনেই যেন আগের প্লেট বা ট্রে খালি পায়।
তো আর কি! লেগে পড়ুন। হ্যাপি খানাপিনা। এত ভালো ভালো ও শিক্ষনীয় পরামর্শ দেয়ার জন্য বেঙ্গল বিটস টিমকে আপনার বাসায় আমন্ত্রণ করতে পারেন। আমরা কথা দিচ্ছি, আমন্ত্রণ রক্ষা করার পাশাপাশি আমরা আপনাকে উপরের সব নিয়মের ডেমোও দেখিয়ে দিবো।