বাংলার রূপ দেখে যেই কবি পৃথিবীর রূপ খুঁজতে চাননি তিনি আমাদের জীবনানন্দ দাশ। জীবনানন্দের মৃত্যুদিনে কবিকে স্মরণ করছি বিনম্র শ্রদ্ধায়।
জীবনানন্দ দাশ ছিলেন নির্জনতার কবি, বাংলার সবুজ শ্যামল রূপ যাকে করেছিল অভিভূত! গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন। বুদ্ধদেব বসু তাঁকে ‘নির্জনতম কবি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে, অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁকে ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন।
“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে?
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে..”
জীবনানন্দ দাশের মায়ের নাম ছিল কুসুমকুমারী দাশ। কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন গৃহিণী, কিন্তু তিনি কবিতা লিখতেন। তাঁর সুপরিচিত কবিতা আদর্শ ছেলে (আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে) আজও শিশুশ্রেণির পাঠ্য।
জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে অন্যতম। জীবনানন্দের বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে ১৯৫৩ সালে পুরস্কৃত হয়। ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাডেমি পুরস্কার লাভ করে। জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মাঝে রয়েছে রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।
কাউকে দেখানোর জন্য নয় জীবনানন্দ লিখতেন নিজের জন্য। লিখে ট্রাঙ্ক ভর্তি করে রেখে দিতেন। জীবনানন্দ দাশের প্রকাশিত রচনার সংখ্যা তিনশোর মতো। এখন যা পাওয়া যায়, সেগুলো তার মৃত্যুর পরে উদ্ধার করা। একবার ট্রেনে করে ফেরার পথে কবির ট্রাঙ্ক চুরি হয়ে যায়। ট্রাঙ্কের সাথে সাথে হারিয়ে যায় লেখা পাণ্ডুলিপিগুলো। এগুলোর কয়েকটি পরে উদ্ধার করা গেলেও সব যায়নি। সেদিন পৃথিবীবাসী বঞ্চিত হয়েছিল অপ্রকাশিত সেই অমূল্য লেখাগুলো থেকে।
জীবনানন্দের প্রিয় শহর ছিল কলকাতা। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ স্থির হওয়ায় কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে সপরিবার কলকাতায় চলে যান কবি। প্রিয় বরিশালে আর ফিরে আসা হয়নি কবির ১৯৫৪ সালে ট্রামের ক্যাচারে আটকে তাঁর শরীর দুমড়েমুচড়ে গিয়েছিল। অনেক গবেষক মনে করেন জাগতিক নিঃসহায়তা কবিকে মানসিকভাবে কাবু করেছিল এবং তাঁর ইচ্ছা শূন্য করে দিয়েছিল। মৃত্যুচিন্তা যেন কবির মাথায় দানা বেঁধেছিল। তিনি প্রায়ই ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কথা ভাবতেন, যে কথা তাঁর কিছু লেখাতেও পাওয়া গেছে। আটদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে প্রিয় কবি জীবনানন্দ তার প্রিয় বাংলা, কলকাতাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।