in

মাইরালামাইরালা ভাল্লাগসেভাল্লাগসে

বেগুনের বাজারে আগুন, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পেঁপে সার্ভিসের সবকটি ইউনিট!

আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত একটি কথা আছে যে, “যার গুণ নাই তাই বেগুন!” কিন্তু এ কথাটি ভূল এবং রমজান মাস এলেই আমরা বেগুন তারপর বেগুনির কদর, গুণ, দর সব হাড়ে হাড়ে বুঝে যাই।
সারাবছর বেগুনের যে দাম থাকে রমজান মাস এলেই তা কখনও দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয়ে যায়! শুধুমাত্র বেগুনির চাহিদা মেটাতেই প্রতিদিনই বেগুনের বহুল ব্যবহার হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বেগুনি কিনে বাসায় নিয়ে গিয়ে দেখা যায় ভেতরে বেগুনির বদলে পেঁপে দেয়া। কিন্তু কেন? এগুলো কেন হয়?
কারা আছে এর পিছনে? কাদের জন্য বেগুনির নাম-ইজ্জত ডুবে যাচ্ছে?  তবে কি বেগুনিকে আমরা ‘পেঁপী‘ বলে ডাকবো? চলুন সরেজমিনে ঘুরে আসা যাক বেগুনের হাট থেকে বেগুনির দোকান নাগাদ, জেনে নেওয়া যাক বেগুনের বাজারের আগুনসম দামের নাড়িনক্ষত্র এবং বেগুনিকে পেঁপে দিয়ে চেপে দেওয়ার কারবার!

বেগুন বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সবজির একটি। বিশেষ করে ইফতারে বেগুনির চাহিদা ব্যাপক তবে এখন বেগুনির নামে আপনি কি খাচ্ছেন জানেন কি? পেঁপী খাচ্ছেন, পেঁঁপী! বেগুনের বাজারে আগুন লেগে যাওয়ায় বেসনের সহায়তায় তা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে পেঁপে সার্ভিস এর সবকটি ইউনিট।
এমতাবস্থায় আমরা গিয়েছিলাম বেগুনের দরদামের আগুন কি অবস্থায় আছে বাজারে তা সরেজমিনে দেখতে। রাজধানীর কাওরান বাজারের একটি কাঁঁচামালের দোকানে গিয়ে জানতে পারি সেখানে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৯০ টাকা পর্যন্ত। তবে এই দর ক্রমশ বাড়ছেই। দোকানটির মালিক মুখলেস মিয়া বলেন – “মামা মনে করুইন যে, অহন ই তো সিজন। ব্যপসা পাতি করবার। তা মাসাল্লাহ্ বেগুন বেইচ্চেয়াই মামা কাম কইরা ফেলাইতাসি। ১ কেজি ৫০০ টেহা ওইলেও পাবলিক ঐ দামেই নিবো। মাইনষে বেগুনরে যে কি হরিমান (পরিমাণ) ভালা পায় তা রমজান আইলে বুঝবার পাই।”

এরপর আইলেরো বেশ কয়েকটি বাজারে গিয়ে বিভিন্ন দোকানে একই চিত্র দেখা গেছে। এরপর ফুটপাতের কয়েকটি ইফতার সামগ্রী বিক্রির দোকানে যাই আমরা।

একটি দোকানে গিয়ে দেখা যায় সেখানে বেগুনি তৈরিতে বেগুনই ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে, এতো সরু করে স্লাইস কাটা হচ্ছে বেগুনের তা একটি নিউজপ্রিন্ট কাগজের পাতার থেকেও কম পুরু। এর কারণ কি জানতে চাইলে দোকানের মালিক জানান, “হেইয়্যার কারণ কি মনু তুই বুঝো না? বেগুনের যে দাম হরছে, ঐ দামে তো মুই বেগুনি বানাইতে হারমু না, তয় মুই এক বেগুন দিয়া ২৫ ডা বেগুনি বানাই, লগের দোহানের নোয়াখাইল্যা মকবুইল্লা যে ৩৫ ডা বানায়, ওগ্গোয়ারে ধরো গা মনু!” মকবুলের দোকানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। তবে সেখানে কয়েকজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে আগ্রহ নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তারা সবাই বিজ্ঞান বিভাগের। উদ্ভিদবিজ্ঞানের ব্যবহারিকে ব্যবহার করার জন্য বেগুনের স্লাইস সংগ্রহ করতে তারা এসেছে। এইবার আলুর পরিবর্তে বেগুনের স্লাইস দিয়ে তারা টিস্যু ও কোষের স্লাইড পরীক্ষা করবে। দোকানটিতে ১ টি বেগুনি দশ টাকা করে বিক্রি হলেও, একটি বেগুনের স্লাইসের দাম ৩০ টাকা করে বিক্রি করছিলো মকবুল মিয়া। সাংবাদিকদের দেখেই সে স্লাইস বিক্রি বন্ধ করে দেয়! আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত সটকে পড়ে সে।

এদিকে মিরপুরে একটি ইফতারির দোকানে গিয়ে দেখা যায় সেখানে বেগুনের বদলে পেঁপে দিয়ে বেগুনি (পড়ুন- পেঁপী) তৈরির কারবার চলছে।ধূলিবালিতে চিকচিক করছে রাস্তাঘাট আর তার মধ্যেই বানানো হচ্ছে পেঁপী। এরকম অভিনব প্রতারণাকে কেন প্রতারণা হিসেবে গণ্য করা হবে না এই মর্মে আদালত জানতে চাইবেন – এ আশা নিয়ে দেশবাসী এখন অপেক্ষায় আছেন। একটু কষ্ট করে হলেও ভোজনরসিক বাঙালি অবশ্য বেগুনির স্বাদ পেঁপী দিয়েই মেটাচ্ছেন। ইফতারি কিনতে আসা নাম প্রকাশে ব্যাপক ইচ্ছুক জনাব হেকমত আলী বলেন, “বাঙালি নুডুলস্ দিয়ে আইসক্রিম বানাইতে পারলে পেঁপে দিয়ে বেগুনি বানাইতে পারবে না কেন বলেন তো? সবই এক, বেগুনের বাজারে আগুন লাগছে বলেই তো পেঁপে দিয়া কাম চালাইতাছে, আর আমি পাইলস্ এর রোগী আমার মতো যারা আছে তারা পেঁপী ই খাইবো, এইটাই ভালা!”

এদিকে সারাদেশেই কমবেশি এই অবস্থা বিদ্যমান রয়েছে।অবস্থার ভয়ানক অবনতি সরেজমিনে ঘুরে দেখে ‘পেঁপী‘ নাম এর একটি প্রতারণামূলক আইটেমকে বাজার থেকে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের নিকট অাহ্বান জানিয়েছে সুভোস (সুশীল ভোক্তা সমাজ!)
অপরদিকে অবস্থার উন্নতিকল্পে বেগুনাধিকার কমিশন চার দফা সুপারিশ করেছে,

১। অবিলম্বে বেগুনের দাম হ্রাস করতে হবে।
২। এই অভিনব প্রতারণা বন্ধে নিয়মিত ‘বেগুন মনিটরিং টিম’ এর আওতায় ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
৩। জাতীয় বেগুননীতি প্রণয়ন করে বেগুনি সংরক্ষণ করতে হবে!
৪। বেগুনের স্লাইস কতটুক পুরু হবে তা বলে নির্দিষ্ট করে দেবে বেগুনাধিকার কমিশন।

এদিকে ইফতার সমাগ্রী বিক্রেতারাও একটি পাল্টা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। তাদের আন্দোলনের প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে,

“বেগুন আর পেঁপে ভেতরে কেবল,
বাহিরে সবার সমান বেসন”

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইফতার ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজ দ্বিমুখী অবস্থানে রয়েছেন।

What do you think?

Leave a Reply

দাম বাড়ার খবরে ঈদ শপিংয়ের টাকায় সিগারেট মজুদ করছেন বিড়িখোররা!

Quiz: কুইজের উত্তর দিয়ে জেনে নিন আপনি আসলে Game Of Thrones-এর কোন বংশের লোক