বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহরে স্টার হতে চাওয়া এক দুর্ভাগা এবং একজন পাঠাও রাইডারকে নিয়ে এই গল্পটি লিখেছেন – নাজমুল হক
আমার তখন স্টার হবার সাধ। একজন স্টারের সাথে দেখা করতে শর্ট টাইমে যেতে হবে কলাভবন। আমি দাঁড়িয়ে আছি বাংলাবাজার ভিক্টোরিয়া পার্কে। বাসে জ্যাম, রিক্সায়ও সেইম, তাই চিন্তা করলাম গরীবের প্রাইভেট সার্ভিস পাঠাও নিবো। কারে চড়ার টাকা নাই, বাইকই ভরসা।
জিরো ফেসবুক চালানো আমার ফোনে কালেভদ্রে কিছু ইন্টারনেট ডাটা থাকে, ওইদিনও ছিলো। পাঠাও অ্যাপস চালু করার পর থেকে প্রতিদিন বিশাল প্রোমোকোড দিলেও, সেই দিন কোন কোড ছিলো না! (অভাগা তো, সাগর, কোড সবই শুকাইয়া যায়)
অফারের কথা বাদ দিলাম, স্টার হলে আমি নিজেই অফার দিবো তাদের। অ্যাপসটা চালু করে ঠিকঠাক সব দিলাম। রাইডারও একজন পেলাম। কিন্তু রাইডার আর আমারে ফোন দেয় না। আমি অপেক্ষায় তার ফোনের আশায়, সে মেবি আমার ফোনের আশায়। এই করে সাত মিনিট গেলো, পরে আমিই ফোন দিলাম-
-আপনি কই ভাই?
-কই যাবেন?
যদিও আমি অ্যাপসে সবকিছু দিয়েই দিছি, তাও বললাম-
-কলাভবন
-যাবো না ভাই!
আমি পুরাই থতমত খেয়ে গেলাম। রিক্সাওয়ালা মামাদের যাবো না শুনেছি কত, খারাপ লাগতো না। কিন্তু পাঠাও রাইডারের না শুনতেও এক টাকা বের হয়ে গেলো, সেজন্য খারাপ লাগলো।
থতমত থেকে ফিরে এসে আবার নতুন রাইডের অনুরোধ করলাম। এই রাইডারটা ভালো, সে নিজেই ফোন দিয়েছে। কিন্তু আমার লোকেশনটা আমি কোনভাবেই তাকে বুঝাতে পারছিলাম না। প্রায় ৫ মিনিটেও বুঝাতে না পেরে তার লোকেশনটা আমি চিনে নিয়ে নিজেই গেলাম তার কাছে। দেখা হতেই সে জানতে চাইলো
-কই যাবেন ভাই?
-টিএসসি।
ভাবলাম কলাভবন না চিনুক টিএসসিতো অন্তত চিনবে, কিন্তু আমার অবাক হওয়া তখনও বাকি ছিলো। সেই বাকিটা পরিশোধ করতেই রাইডার বললো-
-আমি চিনি না একটু চিনিয়ে দিবেন?
এটা শোনার পর আমি তার দিকে অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি, সে নিশ্চিন্তে বাইক স্টার্ট দিয়ে দিলো। কি আর করা, চিনিয়ে দেয়ার রিস্ক নিয়ে উঠে পড়লাম।
উঠেই বুঝলাম, উনি টিএসসি না চিনলেও ঢাকার অলিগলির প্রেমে উনি একেবারে বুদ। চিপা গলি দেখলেই উনি নিজেকে কোনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না! আমি চিনিয়ে দেয়ার আগেই ধুম করে গলির ভেতর ঢুকে পড়তে চাইছেন। উনার ধারণা, সকল নদী যেমন সাগরে মিশেছে ঢাকার সব গলিও তেমন টিএসসির সাথে মিশেছে। অনেক গলির প্রেমে পড়া থেকে উদ্ধার করলেও ফাইনালি একটা গলির প্রেমে পড়ে উনি ঢুকেই পড়লেন। ঢোকার পর যা হবার তাই হলো, রিক্সা গেলে সাইকেল যাওয়ার জায়গা থাকে না, আর মোড়ে মোড়ে চিপাগলির প্রেমিকদের মহড়া তো আছেই। বের হবার ইচ্ছা পোষন করে পেছনে তাকিয়ে দেখি গলির অন্য প্রেমিকদের বিশাল লাইন। অনেক কষ্টে বঙ্গবাজার দিয়ে বের হলাম। স্টার ভাই ফোন দিলেন, উনি চলে যাবেন! ওনাকে ৫ মিনিট থাকার জন্য কনভেন্স করে ফোন রেখে আবিষ্কার করলাম আমার রাইডার গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করছে, এবার কোন দিকে যাবো! বের হলাম বঙ্গবাজার দিয়ে, যাবো টিএসসি কিন্তু জিরো পয়েন্টে কিভাবে আসলাম! ঘটনার আকষ্মিকতায় আমিও ভুলে গেলাম কোন দিকে যাবো!
নিজেকে নিয়ন্ত্রণে এনে যতক্ষনে টিএসসি পৌছালাম, ততক্ষনে আমার স্টার ভাই চলে গেলেন। স্টার হওয়ার সুযোগ মিস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই রাইডার ভাই বললেন-
-ভাই, পাঁচটা স্টার দিয়ে দিয়েন!