“মদ খাওয়ার সময় আমি কোন রিস্ক নেই না” গল্প অবলম্বনে এই ছোট গল্পটি লিখেছেন নাজমুল হক
গতকাল বন্ধুর কাছ থেকে বইটা এনেছি। পড়বো পড়বো করে ফেসবুকে ঢুকেই রাত পার। আজকে বইটা পড়তেই হবে।
টেবিল থেকে বইটা কেমন ফ্যানের বাতাসে উল্টাচ্ছে আমার জন্য।
বইটা আজকে পড়তেই হবে, অন্য কোন কাজ করা যাবে না।
কিন্তু বই পড়ার জন্যতো একটু নেচারাল আলো দরকার। পূর্ব পাশের জানালাটা খুলে দেই! বাতাস আসবে আর বাতাসের সাথে আমার চুল উড়বে। তবেই না বই পড়ার মজা।
বইটা আজকেই পড়তে হবে, বই পড়ার সময় অন্য কোন কাজ আমি করি না।
বইটার পাতা এবার জানালা দিয়ে ঢোকা বাতাসে উল্টাচ্ছে। কী সুন্দর দৃশ্য।
হুমায়ূন আহমেদের হিমু সিরিজ! যাই আলমারি থেকে নীল শাড়িটা পরে নিই। হিমু সিরিজ পড়বো আর নীল শাড়ি পরবো না তাই কী হয়!
শাড়িটা পরেই বইটা নিয়ে বসবো। জানালার বাতাসে বইয়ের আরো কিছু পৃষ্ঠা উলটে গেছে।
কিন্তু শাড়ির সাথে নীল টিপ না হলে ঠিক জমছে না। নীল চুড়ি হলেও ভালো হতো। কিন্তু আমার কাছেতো নীল চুড়ি নাই। টিপও নাই। যাই কিনে নিয়ে আসি।
এসেই বইটা পড়ে ফেলবো! বই পড়ার সময় আমি অন্য কোন কাজ করা একদম পছন্দ করি না।
বইয়ের পাতাগুলো কী সুন্দর করেই না উল্টাচ্ছে।
হিমু সিরিজ পড়তে বসবো, কিন্তু আশেপাশে হলুদ রঙ না থাকলে ক্যামনে হয়! অন্তত জানালার পর্দাটা হলুদ হওয়া চাই। হলুদ সরিষা ফুল হলেও মন্দ হয় না।
যাই আগে হলুদ পর্দা আর সরিষা ফুল ব্যবস্থা করি। বই পড়ার সময় আবার অন্যকোন কাজ করা যাবে না।
বইয়ের প্রায় অর্ধেক পাতা ফ্যানের বাতাসে উলটে আছে। পাতাগুলোকে দেখতে অনেকটা একজোড়া চোখের মতো লাগছে। এই অসাধারণ দৃশ্যটার একটা ছবি তুলে রাখি।
যাই বইটা এবার পড়া শুরু করি। বই পড়ার সময় একদম অন্য কোন কাজ করা যাবে না।
এক কাপ কফি দরকার! বই পড়তে পড়তে খাওয়া যাবে। নাইলে পরে বই পড়া রেখে কফি বানাতে যেতে হবে। বই পড়ার সময় আমি অন্য কোন কাজ একদম করতে চাই না।
বইয়ের পাতাগুলো কেমন খচ খচ করে উল্টাচ্ছে। বইয়ের পাতা উল্টানোর আওয়াজও কেমন সাহিত্য আর শিল্প বহন করে চলে। উফ! কী অসাধারণ। এই শব্দটা নিয়ে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস না দিলেই নয়।
স্ট্যাটাসের সাথে ছবি দিলে বেশ লাইক পাওয়া যাবে। বইয়ের পাতার চোখ হয়ে যাওয়া ছবিটা আছে, সাথে খচখচ করা শব্দসহ ভিডিও। এবার আমার একটা কাব্যিক ছবি হলেই ষোল কলা পূর্ণ।
যাই একটা ছবি তুলি। ফেসবুকে স্ট্যাটাসটা আপডেট দেয়ার পরই বইটা পড়া যাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে। বই পড়ার সময় অন্য কোন কাজ আমি একদম পছন্দ করি না।
বইয়ের পাতায় হলুদ সরিষা ফুল, এক পাশে নীল টিপ, জানালার হলুদ পর্দা হালকা খোলা, হাতে কফির মগ, আর বইয়ের দিকে আমার চোখ! পারফেক্ট ফ্রেম। কিন্তু আমার ক্যামেরাটাতো ভালো না।
স্মরণের একটা ডিএসএলয়ার আছে! ছেলেটা ছবিও তোলে ভালো। আর ওর নামটাও বেশ কাব্যিক! স্মরণ। ওকে একটা ফোন দেই।
বইয়ের পাতাগুলো উল্টাচ্ছে। স্মরণ আসুক। ছবি তুলে আপলোড দিয়েই একেবারে পড়তে বসবো।
– স্মরণ, ফ্রেম একদম রেডি করা, রুমের ভেতর থেকে তুললে পুরো ফ্রেম আসবে না, তুমি পাশের বিল্ডিং থেকে জানালার গ্রিল সহ ছবিটা তুলবে। পাশের বিল্ডিংয়ে চলে যাও, আমি ততক্ষণে সরিষা ফুলের একটা মালা বানিয়ে রাখি। মাথায় দেয়া যাবে।
স্মরণ অসাধারণ ছবি তুলেছে! একদম পারফেক্ট ফ্রেমিং। মাথায় সরিষা ফুলের মালাটা একদম মুকুটের মতো লাগছে। যেনো রুপার মাথায় মুকুট হয়ে ঝুলছে হিমু।
রিডিং হিমুর সাথে “হিমু একটা নেশার নাম” ক্যাপশন দিয়ে ছবি দুটো ও ভিডিওটা আপলোড দিয়ে কিছুক্ষণ কমেন্টের রিপ্লাই দিয়েই বইটা পড়তে বসবো।
বাহ! অনেক লাইক ও কমেন্ট পড়ছে।
টেবিলের উপর বইয়ের পাতাগুলো উল্টাচ্ছে।
উল্টাক, ফেসবুকে চালানোর সময় আমি বই পড়া একদম পছন্দ করি না।