পিস্তলের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই স্ক্যানারের চোখ ফাঁকি দিয়ে এবার প্লেনে গরু নিয়ে উঠে গেলেন কুয়েতগামী এক যাত্রী। গত রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুয়েতগামী ফ্লাইটে এই ঘটনাটি ঘটে। বিমানবন্দর সুত্রে আমরা জানতে পারি যে চট্রগ্রামবাসী নান্না মিয়া নামক ব্যক্তি এই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। তিনি প্রথমে গরুকে অজ্ঞান করে বক্সে ভরে এয়ারপোর্টে নিয়ে আসেন এবং নির্বিঘ্নেই স্ক্যানার মেশিনের দায়িত্বে থাকা অন্য গরুদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মেশিনের মধ্য দিয়ে গরুটিকে প্লেনে বাটি চালান করে দেন। পরে মাঝ আকাশে গরুর জ্ঞান ফিরে এলে গরু বক্সের মধ্যে নিজেকে আবিস্কার করে এবং উত্তেজিত হয়ে হাম্বা হাম্বা শুরু করে। তখন গরুর হাম্বা ডাক শুনে যাত্রীদের মধ্য কৌতুহল তৈরি হলে তাদের চাপে নান্না মিয়া বক্স খুলতে বাধ্য হন। এ পর্যায়ে বক্স খোলামাত্রই গরু বের হয়ে প্লেনের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। ককপিটে থেকে বিমানের ঝাকুনি টের পেয়ে পাইলট নিজেকে বিচক্ষণ প্রমান করতে কুমিল্লায় একটি ধানক্ষেতে প্লেন জরুরি অবতরণ করান। তবে অনেক যাত্রী এসময় ঘুমে ছিল বলে তাদের হিসাব ছিল না, কিন্তু জরুরি অবতরনের ঝাকুনিতে তাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। এ প্রসঙ্গে পাইলট জানান- “ভাই, আমার নামই পাইলট আহমেদ। ছোটবেলায় আমার আব্বা আমাকে ক্রিকেটার বাইনাইতে চাইলেও পড়ে আমি পাইলট হয়ে যাই আর কি!”
পরে পুলিশ এসে নান্না মিয়াকে জিজ্ঞাসবাদ করলে তিনি বলেন-
“বাই আঁর কুয়েতর বন্দুবান্দবল মেজ্জাইন্নে গোস্ত হাইতু সাইয়্যে আঁর হাঁসে, আঁই ইতারারে না গরি ক্যানে? আজার হৈলিও আঁরার সিটাইঙ্গে ওলোর এক্কান ইজ্জত আসে। এতাল্লাই গরু আর মসল্লা লৈয়েরে ফেলেনোর ফাঁঙ্কা বাঁইয়েরে উডি গেঁই।” তিনি কোথা থেকে এত সাহস পেলেন জিজ্ঞেস করলে এ ব্যাপারে তিনি জানান – “আঁরার বেগ্গুনুর জানর জান সিরিয়াস কাঞ্চন বদ্দা আঁর ফ্রেরণা। আঁরার বদ্দা ফিসতল লই এয়ারপোর্ট অথরিটির নাকর তলদি গেইয়েগুই এন্ডে গরু কি জিনিস।” তবে তিনি এও জানান – “এহন ইতারা যেত্তে আঁর গরু রাকিদের এতেল্লাই আঁই টিক গইজ্জি, গরুইবা জঁরাইয়েরে এই ধান ক্ষেতত মেজ্জাইন্নে গোস্ত রান্দি বেগ্গুনুরে হাবাইয়ুম কিন্তু মাগার ওই সিকিউরিটি সোদানির ফোঁয়া ওলোর নামে কেইস গইজ্জুম”
উনার বক্তব্যটি পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে বাংলায় অনুবাদ করা হলো-
(ভাই আমার কুয়েতের বন্ধুবান্ধবরা অনেক শখ করে আমার কাছে মেজবান খাইতে চাইসে, আমি কিভাবে তাদের না করি বলেন? শত হইলেও চাটগাঁর একটা ইজ্জত আছে। তাই গরু আর মশলা নিয়ে প্লেনে ফাঙ্খা বেয়ে উঠে গেসি। আমাদের সবার প্রিয় সিরিয়াস কাঞ্চন ভাই এ ব্যাপারে আমার অনুপ্রেরণা। আর আমাদের এয়ারপোর্ট অথরিটি এতই চৌকশ যে তাদের নাকের নিচ দিয়ে পিস্তল চলে যায় গরু কোন ছাড়। যেহেতু আমার গরুটি বাজেয়াপ্ত হয়েছে তাই আমি চাই সবাইকে এখানেই মেজবান রান্না করে খাওয়াইতে। কিন্তু ওই শালা সিকিউরিটিদের আমি দেখে নিবো, ওদের নামে আমি কেস করবো।)
প্লেনে সে সময়কার অবস্থা সম্পর্কে আহসান হাবীব কেয়ার নামে আরেক যাত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাদের জানান, ”ভাই এই লোকটা আমার পাশের সিটেই ছিলো কথা বার্তা বইলা অনেক আপন আপন লাগসে কিন্তু মানুষজনরে আপন ভাবলে যা হয় আরকি। সে সময় আমি ঘুমে ছিলাম আমার হিসাব ছিলো না হঠাৎ প্রচন্ড ঝাকুনিতে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় আর আমি তাড়াতাড়ি জানলা দিয়ে বের হয়ে ফাঙ্খা দিয়ে নেমে দেখি প্লেন কুমিল্লায় থেমেছে। তো আমি ভাবলাম বাসের মত বুঝি প্লেনও আজকাল কুমিল্লায় ব্রেক নেওয়া শুরু করেছে। পরে জানতে পারি আসল ঘটনা”। তখন পাশে থাকা আরেক যাত্রী বলেন- “অরে রাখেন মিয়া গরুর কাহিনী, আমি ডায়াবেটিসের রোগী। অনেকক্ষন ধইরা মুতার জন্য বসে আছিলাম। একবার প্লেনের বাথরুমে গেলাম কিন্তু বাথরুম অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেইক্ষা মুত আটকাইয়া গেছিলো। এখন এই ক্ষেতে মুতছি! আহ! শান্তি লাগতেছে!”
কিন্তু ঘটনার পরপরই এক সংবাদ বিবৃতিতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছেন- “এত বড় গরু আমাদের স্ক্যানিং মেশিন পার হয়ে আর্চ ওয়ে দিয়ে কিভাবে বিমানে গিয়ে উঠলো তা তদন্তের জন্য ৩ না ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন মীমাংসা না হওয়াতে তদন্ত কমিটি গঠন করা যায়নি। তবে তদন্ত কমিটি কেন গঠন করা গেল না তা নিয়ে ২ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে গঠন করা হয়ে গিয়েছে।”
তারা খুব দ্রুত সেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
বিঃদ্রঃ পীথাগোরাস একদা বলেছিলেন – “ইন্টারনেটে প্রচলিত ৯৯.৯৯% জিনিসই ভুয়া” সুতরাং যেখানে যা দেখেন তা যদি বিশ্বাস করার অভ্যাস/বদভ্যাস আপনার থেকেই থাকে তাহলে তার দায়ভার সম্পূর্ণ আপনার।