সময় পাল্টাচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তড়তড়িয়ে। বদলে যাচ্ছে শহরের চেহারা। ঢাকা শহর এখন আর তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশ নয়। অন্তত আমাদের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী তাই ভাবছেন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রদানকালে তিনি বলেন, আকাশ থেকে ঢাকা শহরকে লস অ্যাঞ্জেলেস মনে হয়। কুড়িল ফ্লাইওভার দেখলে মনে হয় এটি কোনো সিনেমার দৃশ্য। তিনি আরো বলেন, হাতিরঝিলে গেলে মনে হয়, প্যারিস শহরের কোনো অংশে এসেছি। তার কথার রেশ ধরে আসুন দেখে নেই ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তের সাথে আর কোন কোন বিখ্যাত শহরের মিল রয়েছে।
১। ফার্মগেট: ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা ফার্মগেট। এটি শহরের ব্যস্ততম ও জনবহুল জায়গাগুলোর একটি। এখানে রয়েছে বিশাল বিশাল ভবন এবং তার সাথে এটি ঢাকা শহরের একটি অন্যতম পরিবহন কেন্দ্রস্থল। তাই ফার্মগেটকে তুলনা করা যায় জাপানের টোকিওর সাথে।
২। মিরপুর: ঢাকা শহরের অনেক বড় একটি এলাকা মিরপুর। আবাসিক এলাকা ও বাণিজ্যিক এলাকা দুটোই রয়েছে এখানে। কিন্তু বর্ষা কালে মিরপুরের রাস্তায় গাড়ির পাশাপাশিই নৌকাও চলে, ঠিক যেন ইতালির ভেনিস!
৩। গুলশান: তর্কসাপেক্ষে ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত এলাকা গুলশান। বড় অংশ আবাসিক হলেও নামীদামী বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ সহ বিভিন্ন বড় বড় অফিস এখানে অবস্থিত। তাছাড়া বিভিন্ন বিদেশী দূতাবাস গুলশানে হওয়ায় কেউ প্রথম এসে এটিকে নিউ ইয়র্ক ভাবতেই পারে!
৪। বনানী: নতুন ঢাকার মধ্যভাগে অবস্থিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বনানী। শহরের অন্যতম অভিজাত আবাসিক এলাকা হিসেবে খ্যাতির পাশাপাশি এর একটি অংশ কূটনৈতিক এলাকা হিসেবেও পরিচিত। জমির চড়া দাম এবং সারি সারি খাবারের রেস্টুরেন্ট, বনানী যেন স্পেনের মাদ্রিদের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
৫। ধানমন্ডি: ঢাকার অভিজাত পাড়াগুলোর মধ্যে অন্যতম ধানমন্ডি। মূলত আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত হলেও এখানে প্রচুর অনাবাসিক ভবন রয়েছে। ধানমন্ডি জনসংখ্যার দিক থেকেও বেশ বড়। সবদিক থেকে দেখলে ধানমন্ডি মূলতঃ ভবিষ্যতের লন্ডন। শুধু লন্ডনের আছে টেমস নদী, আর ধানমন্ডিতে আছে ধানমন্ডি লেক!
৬। পুরান ঢাকা: মূলত ঢাকা মহানগরীর আদি অংশটি পুরান ঢাকা নামে পরিচিত। ইতিহাস থেকে জানা যায় এটি একসময় খুবই সুন্দর ও গোছানো জায়গা ছিলো, কিন্তু বর্তমান প্রশাসনের অবহেলায় এলাকাটি তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে। পুরান ঢাকায় প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন, যেমন লালবাগ কেল্লা, ছাড়াও পুরাতন আমলের অনেক বাড়ি রয়েছে। এছাড়া পুরান ঢাকার অধিবাসী, ঢাকাইয়ারা খাবারদাবার ও উৎসবমুখরতার জন্য বিখ্যাত। সুতরাং প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী ও বর্তমানে ইতালির রাজধানী রোমের সাথে পুরান ঢাকার মিল পাওয়া যায়!
৭। সদর ঘাট: সদরঘাট মূলত বুড়িগঙ্গার তীরে একটি নদী বন্দর যাকে ঘিরে এলাকাটি গড়ে উঠেছে। ঢাকা শহরের নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকেন্দ্র সদরঘাট। প্রায় দুই দশক আগে বন্দরের পাশে গড়ে ওঠা ছোটো একটি জনপদ বর্তমানে একটি ব্যস্ত ব্যবসায়িক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ঢাকার সদরঘাট যেন চীনের সাংহাই!
৮। মতিঝিল: ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মতিঝিল ঢাকা শহরের প্রধান ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক এলাকা। বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এখানে অবস্থিত। এছাড়া ঢাকার সর্বোচ্চ ভবন এখানে অবস্থিত। এরকম বাণিজ্যিক পরিকেন্দ্রে পরিণত হওয়ায় মতিঝিলকে সিঙ্গাপুর বলা যেতে পারে।
৯। শাহবাগ: পুরান ঢাকা ও নতুন ঢাকার মাঝামাঝি অবস্থিত শাহবাগ এলাকাটি। শাহবাগে রয়েছে বেশ কিছু বাজার ও মার্কেট, ফলেই স্বাধীনতার পর থেকেই এলাকাটি বিভিন্ন উৎসবের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এছাড়া দেশের বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি এখানে অবস্থিত। সবকিছু মিলিয়ে শাহবাগের সাথে আমোরিকান শহর বোস্টনের মিল রয়েছে।