via GIPHY
নেটফ্লিক্সের মাথানষ্ট সাই-ফাই থ্রিলার সিরিজ “DARK” যেমন জটিল তেমনই সুন্দর। টাইম ট্র্যাভেলের সফিস্টিকেশনকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার ফলে একটি শক্ত পোক্ত ফ্যানবেজ তৈরি করতে এর দুইটি সিজন লেগে গেছে । যা স্বাভাবিক, কেননা “Everything Is Connected” । আর ঠিক এমন সময়েই দরজায় কড়া নাড়ছে “DARK” এর সিজন থ্রি, যেখানে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে (আশা করি)।
via GIPHY
কিন্তু ডার্ক এমন কোন সিরিজ না যে ১২ মাস আগে দেখলাম আর কাহিনি মনে রইলো। বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ন ক্যারেক্টার এবং সাইকেল ভেদে তাদের একাধিক চরিত্রায়ণের কারণে মাথায় প্যাঁচ লেগে কনফিউজড হয়ে যেতেই পারেন, সেটা দোষের কিছু না । তাই ডার্কের নতুন সিজন যেন আপনার ব্রেইনের সাথে ছিনিমিনি না খেলতে পারে, এজন্যই আমাদের এই রিক্যাপ। মাথা ঠান্ডা করে, এক গ্লাস পানি নিয়ে , ফ্যান বা এসি চালু করে বসুন। একটু ধকল তো যাবেই-
ডার্কের কাহিনী আবর্তিত হয় উইন্ডেন শহরের বসবাসরত কাহ্নওয়াল্ড, নিয়েলসেন, টাইডামেন এবং ডপ্লার ফ্যামিলির সদস্যদেরকে ঘিরে যারা ৩৩ বছরের ব্যবধানে তিনটি আলাদা আলাদা টাইম সাইকেলে (২০১৯-২০২০, ১৯৮৬-১৯৮৭ এবং ১৯৫৩-১৯৫৪) বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে একে অপরের সাথে খুবই ক্লোজলি কানেক্টেড।
***Warning, Major Spoiler Alert***
আবার বলছি, যদি DARK – এর সিজন ১ এবং ২ না দেখে থাকেন তাহলে আপনার আর আগানো ঠিক হবেনা।
এক নজরে কাহ্নওয়াল্ড, নিয়েলসেন, টাইডামেন এবং ডপ্লার ফ্যামিলি
কাহ্নওয়াল্ড
নিয়েলসেন
টাইডামেন
ডপ্লার
সিরিজটি টাইম ট্র্যাভেলের উপর ফোকাস করে বানানো এবং এখানে টাইম ট্র্যাভেলের সমর্থনে ঈশ্বরকণার ভূমিকা দেখানো হয়েছে । ২০২০ সালে উইন্ডেনের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে সৃষ্ট ব্ল্যাক ম্যাটার এই ঈশ্বরকণা হিসেবে কাজ করে। একে স্টেবলাইজ করলে এটি “ওর্ম হোল” এর মতো আচরণ করে অর্থাৎ তখন যে কেউ বা যেকোনো বস্তু টাইমের মধ্য দিয়ে ট্র্যাভেল করতে পারে।
জোনাস কাহ্নওয়াল্ড একজন কনফিউজড টিনেজার, যে কি না তার বাবার সুইসাইডের ট্রমা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। জোনাসকে তার বাবার সম্পর্কে রহস্য উদ্ঘাটনে সাহায্য করে বয়স্ক ক্লডিয়া টাইডামেন, যিনি নিজেই একজন টাইম ট্র্যাভেলার। জোনাস মার্থা নিয়েলসেন নামক আরেক টিনেজারকে ভালবাসে- কিন্তু তাদের রিলেশন কমপ্লিকেটেড (লিটারেলি!)
via GIPHY
এবার একটু নড়েচড়ে বসেন, কেননা টেকনিকালি জোনাস হলো মার্থার ভাতিজা আর এদিকে মার্থা সম্পর্কে জোনাসের ফুপি। কারণ জোনাসের বাবা আসলে ২০১৯ সালে হারিয়ে যাওয়া মার্থার আপন ভাই “মিক্কেল” যে কি না অতীতে গিয়ে (১৯৮৬-১৯৮৭ টাইম সাইকেলে) আটকা পড়ে যায়। এই “মিক্কেল” অতীত থেকে আর ফিরতে পারে না। সেখানে তার নাম রাখা হয় “মাইকেল কাহ্নওয়াল্ড”, অতীতেই সে বড় হতে থাকে এবং একসময় বিয়ে করে। এই মাইকেল কাহ্নয়াল্ডই হচ্ছেন জোনাস এর বাবা।
মাইকেল তার নিজেরই অল্পবয়স্ক সত্তা “মিক্কেল” এর ২০১৯ সালে হারিয়ে যাওয়ার কয়েকমাস আগে সুইসাইড করে। এখানে কিন্তু জোনাস নিজেই টাইম ট্র্যাভেল করে এসে মাইকেলকে তার ডেথ এর কথা জানিয়ে সুইসাইডের আইডিয়াটা দিয়ে যায়।
আগেই বলেছি ধকল যাবে, চলুন সামনে আগাই।
বছরের পর বছর ধরে টাইম ট্র্যাভেলের লুপ বজায় রাখার জন্যে বেশকিছু ডিভাইস বানানো হয়েছে; সেগুলো একাধিকবার হাতবদলও হয়েছে।
via GIPHY
উদাহরণ উইন্ডেনের জঙ্গলে অবস্থিত গুহাটির কথা বলা যায়, যেটি টাইম ট্র্যাভেল করে ১৯৫৩, ১৯৮৬ এবং ২০১৯ সালে যাওয়া আসার পোর্টাল হিসাবে কাজ করে। অতীতে কোন এক অজানা সময়ে “সিক মুন্ডাস” নামক একটি গ্রুপ গুহার প্যাসেজটি তৈরি করে ।
“সিক মুন্ডাস” হলো টাইম ট্র্যাভেলারদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি সিক্রেট সোসাইটি যারা টাইম এবং ইশ্বরবাদ নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত।
এখন দ্বিতীয় সিজনের শুরুতে জোনাস, যে কিনা এখন ২০৫৩ সালে আছে; পাওয়ার প্লান্টের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে সে ইশ্বরকণা খুঁজে পায় এবং তার সাহায্যে ১৯২১ সালে চলে যায়। ১৯২১ সালে গিয়ে জোনাসের সাথে পরিচয় হয় “সিক মুন্ডাস” গ্রুপের লিডার এডাম এর সাথে ।
এই পর্যন্ত সহজই ছিল, কি বলেন?
আচ্ছা। এই পর্যায়ে জোনাসের সাথে এডাম কথা বলার সময় তাকে জানায় যে, সে আসলে জোনাস। পার্থক্য এটাই যে এডাম ভবিষ্যতে বিলং করে যেখানে সে জোনাসের থেকে বয়সে ৬৬ বছর বড়। শুরুতে যে ক্লডিয়া এর কথা বলেছিলাম মনে আছে? যে জোনাসকে টাইম ট্র্যাভেলের ব্যাপারে গাইড করে ? ব্যাপারটা এমন যে ক্লডিয়া আর এডামের সম্পর্ক অনেকটা শাপে নেউলের মতো। তারা দুজন এই যুদ্ধে পরস্পরের বিপক্ষে লড়াই করছে। তাই ক্লডিয়া জোনাসকে টাইম ট্র্যাভেল শিখায় যেন সে অতিতে ফেরত গিয়ে “পৃথিবী ধ্বংস করে নতুনভাবে দুনিয়া শুরু” করার পরিকল্পনারত এডামকে থামিয়ে তার প্ল্যান ফেইল করাতে পারে।
যদিও সিজন ১ এবং সিজন ২ জুড়ে জোনাসকে আমরা একবার ক্লডিয়ার হয়ে আরেকবার এডামের হয়ে টাইম অল্টার করার জন্য কাজ করতে দেখি কিন্তু সে কিভাবে মেন্টালি এবং ফিজিক্যালি এডামে পরিণত হয় তা আমরা জানি না। হয়তো সিজন থ্রি তে এটি খোলাসা করা হবে।
এতক্ষন যেহেতু পড়েছেন, আপনার জন্যে আরেকটু সহজ করি-
সিরিজের রহস্যময় চরিত্র নোয়াহ হলো এডামের অধীনে কর্মরত সিক মুন্ডাস গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। টাইম ট্র্যাভেলের ক্ষমতা থাকার সরূপ তরুন বয়সে নোয়াহ্ এর সাথে এলিজাবেথের পরিচয় হয়। তারা ২০১৯-২০৫৩ সালের মধ্যে একসাথে বেড়ে উঠে এবং কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। তাদের মেয়ের নাম রাখা হয় শার্লেট।
via GIPHY
কিন্তু কেউ শার্লেট কে নিয়ে অতীতে গিয়ে লুকিয়ে রাখে। ফলে সে আশির দশকে বেড়ে উঠতে থাকে এবং একসময় তার কন্যা এলিজাবেথ জন্ম নেয়। (এই এলিজাবেথই কিন্তু ২০১৯-২০৫৩ সাইকেলে তার মা)
সামনে রাখা গ্লাস থেকে পানি পান করেন এবার।
তো ব্যাপারটা এমন দাঁড়ালো যে, নোয়াহ হলো শার্লেট এর বাবা আর এই শার্লেট এর নিজের মেয়েই(এলিজাবেথ) তার মা। সিজন টু তে , নোয়াহ এই ফ্যাক্ট শার্লেট কে জানায়। এখন, শার্লেট এর স্বামী পিটার ডপলার টাইম ট্র্যাভেল এবং নোয়াহ এর গোপন বাংকার সম্বন্ধে এই সত্য জেনে ফেলে। এরপর থেকে পিটার এবং শার্লেট টাইম ট্র্যাভেলের ব্যাপারে তথ্য উপাত্তে ঠাসা একটি নোটবুক থেকে তিনটি টাইম সাইকেলের সম্বন্ধেই আরো বিস্তারিতভাবে জানতে পারে।
ফ্যান এসির নিচে বসে থাকলেও এতক্ষণে আপনার ঘাম ঝড়ার কথা, যা-ই হোক,
জোনাসের লাইফে ফেরত আসা যাক। সিজন টু অনুসারে জুন ২৭, ২০২০ হলো “এপোক্যালিপ্স ডে”। আর এই দিনের চুড়ান্ত পরিণতিকে থামাতেই দুইটি আলাদা টাইম পিরিয়ডে জোনাসের দুইটি আলাদা ভার্সন প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তরুন জোনাস ক্লডিয়াকে সাহায্য করে আর মাঝবয়সী জোনাস তার মা হ্যানাহ এবং “মিক্কেল” এর মা ক্যাথেরিনার সাথে কথা বলে তাদেরকে বিষয়টি জানায়।
২০২০ সালের এপোক্যালিপ্স এর প্রাক্কালে তরুন নোয়াহ মাঝবয়সী জোনাসকে পেয়ে তাকে একটি চিঠি ধরিয়ে দেয়। নোয়াহ বলে যে এই চিঠি মার্থার লেখা। চিঠিতে কি ছিল সেটা আমরা দেখতে পাই না, কিন্তু জোনাসের অভিব্যক্তি দেখে বুঝা যায় সে ডিস্টার্বড। নোয়াহ এই জোনাসকে বলে সে যেন সাইকেলটা চালু রেখে মার্থা এবং তার বন্ধুদেরকে বাঁচায়। ফলে মধ্যবয়স্ক জোনাস মার্থাকে রক্ষা করার জন্য তাকে নিয়ে বাংকারে চলে আসে।
via GIPHY
এই পর্যন্ত সবই ঠিক চলছিল কিন্তু …
মার্থা বাংকার থেকে পালিয়ে তার ভালবাসার মানুষ তরুন জোনাসকে খুঁজে পায়। সেখানে এডাম আবির্ভুত হয় এবং কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই সে মার্থাকে মেরে ফেলে। হত্যার পর সে জোনাসকে উদ্দেশ্য করে বলে যে, মার্থাকে হারানোর শোকই তাকে ভবিষ্যতের এডামে পরিণত করবে।
via GIPHY
জোনাস মার্থাকে হারানোর বিষয়টি মেনে নিতে না নিতেই অন্য এক মার্থা সেই রুমে প্রবেশ করে। হতবম্ব জোনাসকে সে বলে, “কোন সময়” থেকে আমি এসেছি সেটা এখন আর প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হচ্ছে “কোন ওয়ার্ল্ড থেকে এসেছি । যাও খুঁজে বের করো।”