হাওরে ভ্রমন করার প্রসঙ্গ উঠলে প্রথমেই আমাদের মাথায় ভেসে উঠে সুনামগঞ্জের বিখ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওর। নিঃসন্দেহে টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পর্যটন স্থল। কিন্তু কিছু মানুষ এমনও আছেন যারা পর্যটন স্পটের ভিড় এড়িয়ে ঘুরে বেড়াতে চান কিছুটা শান্তিতে। মিশে যেতে চান একদম নীরব নিস্তব্ধ প্রকৃতিতে, তাদের জন্যই আমাদের আজকের ঘূর্ণিপাক এক্সপ্রেসের আয়োজন। একদম অজানা অখ্যাত কিন্তু ভীষণ বিষণ্ণ শান্ত “নিকলী হাওর” নিয়ে-
কোথায় এই নিকলি হাওর?
নিকলী হাওর কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলায় অবস্থিত। নিকলী উপজেলার উত্তরে করিমগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিনে বাজিতপুর উপজেলা, পূর্বে মিঠামইন উপজেলা এবং পশ্চিমে কটিয়াদী উপজেলার অবস্থান।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে প্রথমে কিশোরগঞ্জ যেতে হবে, কিশোরগঞ্জ যাওয়ার জন্য বাস এবং ট্রেন দুই উপায়েই যাওয়া যায়, ট্রেনে যেতে হলে কমলাপুর থেকে কিশোরগঞ্জগামী এগারোসিন্ধুর সকাল ৭.১৫ মিনিটের ট্রেনের টিকিট কেটে উঠে পরুন (ভাড়া ১২৫-২৫০ শ্রেণীভেদে) আর বাসে যেতে হলে মহাখালী বা সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে কিশোরগঞ্জগামী অসংখ্য বাস আছে (ভাড়া ১৯০-২২০)। কিশোরগঞ্জ নেমে রেলস্টেশনের সামনে আসলেই পাবেন নিকলীগামী সিএনজি স্ট্যান্ড। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা আর সময় লাগবে এক ঘন্টা।
কোথায় থাকবেন?
নিকলীতে নেমে সেখানেই মোটামুটি মানের কিছু হোটেল পেয়ে যাবেন। ভাড়া (২০০-৫০০) এর মাঝে। এছাড়া আগে থেকে যোগাযোগ করে নিলে স্থানীয় উপজেলা পরিষদ ডাক বাংলোতেও থাকতে পারবেন। ডাক বাংলো মোটামুটি বেশ ভালো।
কি খাবেন?
হাওর হচ্ছে মাছের সাম্রাজ্য আর সেখানে গিয়ে যদি হাওরের ফ্রেশ মাছ না খান তাহলে পুরো ভ্রমনই বৃথা, স্থানীয় হোটেলগুলোতে হাওরের ফ্রেশ মাছ দিয়ে লাঞ্চ করুন , আর যদি ডাকবাংলোতে থাকার ব্যাবস্থা করতে পারেন তাহলে স্থানীয় বাজার থেকে খুব কম দামে ফ্রেশ মাছ কিনে ডাকবাংলোর কেয়ারটকারকে বললেই রান্না করে দিবে
দর্শনীয় স্থানসমূহ–
নিকলীর মুল আকর্ষণ হচ্ছে হাওর, অন্যন্য পর্যটন স্পটগুলোতে টুরিস্ট তেমন একটা আসেনা (এইটা একটা ভালো দিক যদিও) তাই আপনি খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে একদিনের জন্য ট্রলার ভাড়া করে পুরো হাওর ঘুরে দেখতে পারেন। স্থানীয় বাজারে যোগাযোগ করলেই ট্রলার এর খোঁজ পেয়ে যাবেন।ভাড়া নিবে ২০০০-৩০০০ (অবশ্যই দল বেধে যাবেন )। দিগন্ত বিস্তৃত সচ্ছ জলরাশির বুকে ট্রলারে করে ঘুরে বেরিয়ে ছোট দ্বীপের মত ভাসমান গ্রাম, মাছ ধরা জেলেদের ব্যস্ততা দেখতে দেখতে কখন যে দিন পার হয়ে যাবে টেরই পাবেন না।
হাওর ছাড়াও আর কিছু স্থান যেমন- নিকলী বেড়িবাঁধ, পাহাড় খাঁর মাজার, গুরই শাহী জামে মসজিদ ঘুরে আসতে পারেন। এছাড়া অস্টগ্রাম, মিঠামইন এসব উপজেলা গুলোতে থেমে ট্রলার থামিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। মিঠামইন উপজেলার বাজারে বিশাল এক হাঁসের হাট বসে।
যাওয়ার উপযুক্ত সময়-
হাওর হওয়ার কারনে যদি হাওরের আসল রুপ দেখতে চান তাহলে জুনের শেষ দিক থেকে জুলাই এর শেষ পর্যন্ত হচ্ছে নিকলী যাওয়ার উপযুক্ত সময়। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন টুরিস্ট স্পট না হওয়ার কারনে এখানকার বেশির ভাগ মানুষই গ্রামের সহজ সরল সাধারন মানুষ। তাদের সাথে যথাসম্ভব ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।
“এবং” কেন যাবেন-
ঢাকা থেকে মাত্র ৩ ঘন্টার দূরত্বের এই জলাভুমি আপনাকে নাগরিক জীবনের সকল ব্যস্ততা , ঝঞ্ঝাট, অফিস, ভিড় এসব কিছু থেকে এমন এক দূরত্বে নিয়ে যাবে যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। ভরপুর পূর্ণিমা হলে নৌকা বা ট্রলারে কাটিয়ে দিতে পারেন আস্ত একটা রাত যা আপনাকে হারিয়ে নিতে যথেষ্ট। সকালে গিয়ে রাতে ফেরত আশা গেলেও আস্ত একটা রাত সেখানে কাটিয়েই দেখুন না কেমন পরিপূর্ণ মনে হয় জীবনটাকে!