সাধারণত আমরা ঘুরতে গেলে যে জায়গাগুলো বেশি বিখ্যাত সেখানেই ঘুরতে যাওয়ার চেষ্টা করে থাকি। কিন্তু একসাথে অনেক মানুষ একই জায়গায় যাওয়ার ফলে ঘোরার আনন্দ নিমিষেই মিলিয়ে যায়। তাই যারা নিরিবিলি ঘুরতে পছন্দ করেন তাদের জন্যে ‘বিরিশিরি’ হতে পারে অন্যতম পছন্দের জায়গা। বিরিশিরি নেত্রকোনার দুর্গাপূর উপজেলার একটি গ্রাম। যদিও এখন অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন সেখানে কিন্তু এখনো অন্যন্য টুরিস্ট স্পটগুলোর তুলনায় বিরিশিরি অনেক শান্ত ও নিরিবিলি।
কীভাবে যাবেন?
বিরিশিরিতে যাওয়ার জন্য মহাখালী থেকে সরাসরি বাস পাওয়া যায়। সকাল সাড়ে ৭টায় বিরিশিরির উদ্দেশে প্রথম বাস ঢাকা ত্যাগ করে। তারপর প্রতি ৪৫ মিনিট পরপর একটা বাস ছেড়ে যায়। মাত্র ৪শ টাকা ভাড়ায় বিরিশিরি যেতে আপনার সময় লাগবে প্রায় ৫ ঘণ্টা। বাস যাবে বিরিশিরি বাজার পর্যন্ত ।
বিকল্প রুটে যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে হবে। এরপর ময়মনসিংহ থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়েও দূর্গাপূর যেতে পারেন। এজন্য আপনাকে খুব সকাল সকাল রওনা দিতে হবে। আপনি যদি সকাল ৬টার দিকে ঢাকা থেকে রওনা হন তাহলে দূর্গাপূর পৌঁছাতে আপনার ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লাগবে।
আর যদি আরো কম খরচে যেতে চান তবে কমলাপুর থেকে প্রতিদিন রাতে লোকাল ট্রেন ছাড়ে যা একদম জারিয়া বাজার পর্যন্ত যায়, ভাড়া ৯০ টাকা করে। জারিয়া বাজারে নেমে সেখান থেকে টেম্পু করে একদম বিরিশিরি পর্যন্ত যেতে পারবেন।
থাকবেন কোথায়?
দু-চার জনের ছোট গ্রুপ করে যেতে পারেন। এতে আপনার খরচ অনেকটা বাঁচাতে পারবেন। আর এজন্য যেটা সবচেয়ে ভালো হবে ‘স্বর্ণা রেস্ট হাউজ’। বাস থেকে যেখানে নামবেন সেখানেই এই রেস্ট হাউজটি। মাত্র ৫ থেকে ৮শ টাকার মত ভাড়ায় মিলবে ডাবল বেডের একেকটা কক্ষ। এছাড়া YWCA নামের আরেকটা রেস্টহাউস রয়েছে। এ জায়গাটা বেশ ভালো। এ রেস্ট হাউজের সামনে একটা সুন্দর বাগানও রয়েছে। যদিও এখানে পৌঁছাতে আপনাকে কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হবে। মূল রাস্তা থেকে বেশ খানিকটা ঝোপঝাড়ের ভিতর দিয়ে হেঁটে গিয়ে এখানে পৌঁছাতে হবে। যদি বড় দলবল নিয়ে যাওয়া হয়, তবে এটা ভালো অপশন।
দেখার কি আছে?
সোমেশ্বরী নদী: দূর্গাপুরের আসল সৌন্দর্য সোমেশ্বরী নদী। সোমেশ্বরী নদীটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের অভ্যন্তরে সীমসাংগ্রী বা সমসাংগা নামক স্থান থেকে উৎপন্ন হয়ে বাঘমারা বাজারের পাশ দিয়ে দূর্গাপুরে প্রবেশ করেছে। সীমসাংগ্রী থেকে উৎপন্ন বলেই সোমেশ্বরী বলা হয়। আবার জনশ্রুতি আছে যে, সুসং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সোমেশ্বর পাঠকের নামানুসারে এর নাম সোমেশ্বরী হয়েছে।
বিজয়পুর পাহাড় : সোমেশ্বর নদীর পার হয়ে যেতে হয় বিজয়পুর গ্রামে এবং এখানেই আছে গোলাপি, সাদা, কমলা রঙের চিনা মাটির পাহাড়। পাহাড় থেকে চীনা মাটি সংগ্রহের ফলে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট সবুজ, স্বচ্ছ পানির গভীর জলাধার।
রাশমণি স্মৃতিসৌধ : রানীখং থেকে বিজয়পুর পাহাড়ে যাওয়ার পথে বহেরাতলীতে আছে হাজং মাতা রাশমণি স্মৃতিসৌধ। ১৯৪৬ সালের ৩১ জানুয়ারি সংঘটিত কৃষক ও টঙ্ক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের নেত্রী হাজং মাতা রাশমণির স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে রাশমণি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এখানে নির্মাণ করেছে রাশমণি স্মৃতিসৌধ।
এছাড়া আছে বিরিশিরি আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি, সাধু যোসেফের ধর্মপলি, টঙ্ক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ, গারো পাহাড়, সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি।
খাবেন কি ?
আগে থেকে জানালে মূলত রেস্টহাউজগুলোই খাবারের ব্যবস্থা করে রাখে। তবে নেত্রকোনার বিখ্যাত বালিশ মিস্টি খেতে অবশ্যই ভুলবেন না।